হলো ব্লক কি? | হলো ব্লক এর কাজ, হলো ব্লকের সুবিধা ও অসুবিধা | সিরামিক ইটের সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ

আজকে আমরা সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ভাইদের জন্য নিয়ে এসেছি “হলো ব্লক কি”। আসা করি আপনাদের এই টপিক পছন্দ হবে। তো চলুন পড়া যাক:

হলো ব্লক কি?

বিশেষ ধরণের ইট সাধারণত আয়তকার ঘনবস্তু কিন্তু নির্মাণে ব্যবহারের সুবিধার জন্য, অবস্থানগত আকৃতির কারণে বা ডিজাইনারের নির্বাচনের কারণে বিশেষ বিশেষ আকার-আকৃতির ইটের প্রয়োজন দেখা দেয়। এগুলোকে হলো ব্লক বা সিরামিক ইট বলা হয়।

  • ছক অঙ্কিত ইট:– ইটের গাঁথুনির কাজে।
  • কোপিং ইট:– কোপিং এর কাজে।
  • কর্নিশ ইট:– কার্নিশের কাজে।
  • গাটার ইট:– ড্রেনের কাজে।
  • জ্যাম্ব ইট:- দেওয়ালের কোনায় অলংকারমূলক কাজে।
  • বুল নোজ ইট:– অলংকারমূলক কাজে।
  • খাঁজকাটা সুস্থিত ইট:– অলংকারমূলক কাজে।
  • প্লিনথ ইট:– প্লিনথের কাজে।
  • স্ট্রিং কোর্স ইট:– স্ট্রিং কোর্সে।
  • ঝাঁঝরা ইট:– ইমারতের দেওয়ালে, সড়কের ডিভাইডারে।
  • ফাঁপা ইট:– ইমারতের ফাঁপা দেওয়ালে, সড়কের ডিভাইডারে।

হলো ব্লক কাকে বলে?

যেসব ব্লকের ম্যাসনারি বা কংক্রিট ফাঁকা কোর এলাকায় ক্ষেত্রফল মোট ক্ষেত্রফলের ২৫% এর অধিক কিন্তু ৪৫% এর অধিক নয় সেগুলোকে হলো ব্লক বলা হয়। 

ব্রিক ম্যাসনরির হলো ব্লক বা হলো ব্রিক টেরাকোটা তৈরির কাদার মতো কাদা দিয়ে তৈরি করা হয়। এগুলো কাজের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন আকার-আকৃতিতে তৈরি করা হয়ে থাকে। ঈপ্সিত আকারের ডাই বা মোল্ডের সাহায্যে এগুলো তৈরি করা হয়।

কাদায় তৈরি হলো ব্লক শুকানোর পর বা পোড়ানোর পূর্বে আকার-আকৃতিতে সৌন্দর্য আনয়ন এবং নিখুঁতভাবে কাজে লাগানোর সুবিধার জন্য মোল্ডে পুনরায় চাপ দিয়ে নেয়া হয় এবং দহন সীমায় পোড়ানো হয়।

কাদার তৈরি হলো ব্লকে শেল ফাঁকা অংশকে আবেষ্টন করে থাকে এবং ওয়েভ সেলের মধ্যস্থ পার্টিশন হিসেবে থাকে। এগুলোতে শেলের পুরুত্ব ন্যূনতম ২ সেমি এবং ওয়েভের পুরুত্ব ন্যূনতম ১ সেমি হবে।

কংক্রিট হলো ব্লকের মুখপাতের পুরুত্ব ন্যূনতম ৫ সেমি হবে, নিট ক্ষেত্রফল মোট ক্ষেত্রফলের ন্যূনতম ৫৫% হতে ৬০% হবে। ব্লকে কোরের সংখ্যা কমপক্ষে দুটি থাকবে। এগুলো তৈরিতে সূক্ষ্ণ এগ্রিগেট ৬০% এবং স্থুল এগ্রিগেট ৪০% (৬ মিমি হতে ১২ মিমি আকারের) ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

সিরামিক ইট কাকে বলে?

সিরামিক ইট সাধারণ ইটের কাদা দিয়েই তৈরি করা হয়ে থাকে। তবে এগুলো মেশিন মোল্ডিং-এ তৈরি করা হয়। ফলে এগুলোর ঘনত্ব সাধারণ ইটের তুলনায় অধিক হয় এবং এগুলো সাধারণ ইটের চেয়ে অধিক চাপ নিতে পারে। এগুলো কাজের চাহিদা অনুযায়ী আকার-আকৃতিতে ও বর্ণে তৈরি করা হয়।

এগুলোর পানি শোষণের মাত্রা কম এবং আবহক্রিয়ায় কম আক্রান্ত হয় এবং স্থায়িত্বের মাত্রাও অধিক। এগুলোর পৃষ্ঠদেশ বেশ মসৃণ বিধায় দেয়ালে স্থাপনে সহজ এবং এগুলোর জন্য প্লাস্টারিং করতে হয় না।

হলো ব্লক ও সিরামিক ইটের ব্যবহার  কি?

.এগুলো ভারবাহী ও অভারবাহী দেওয়াল নির্মাণে ব্যবহৃত হয়।

.এগুলো স্টোন ফেসিং এবং বিনা স্টোন ফেসিং এ দেওয়ালেও ব্যবহার করা হয়।

.কংক্রিট হলো ব্লক তৈরির সময় পৃষ্ঠের উপর ভিত্তি করে সাধারণ ফিনিশড পৃষ্ঠের জন্য, গ্লেইজড ফিনিশড পৃষ্ঠের জন্য, স্লাম্পড ফিনিশড পৃষ্ঠের জন্য, বিশেষ ধরণের ফেইস ফিনিশড পৃষ্ঠের জন্য ও রঙিন ফিনিশড জন্য এগুলো ব্যবহার করা যায়।

.এগুলোর কাজ ইটের চেয়ে শক্তিশালী হয়।

কাদার (ব্রিক) হলো ব্লক: এগুলো ফাঁকা দেওয়াল, পার্টিশন দেওয়াল, মেঝে, আর্চ পার্টিশন, অগ্নিরোধক, শব্দ অন্তরক ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

সিরামিক ইট: এগুলো সৌন্দর্যবর্ধন কাজে, আর্চ,ফুটপাত,অলষ্কারমূলক ম্যাসনরি কাজে ব্যবহৃত হয়।

হলো ব্লকের সুবিধা-অসুবিধা 

আমরা এখন দেখবো হলো হলো ব্লকের সুবিধা-অসুবিধা :

হলো ব্লকের সুবিধাসমূহ :-

১.ব্লকগুলোর আকার নিয়মিত বিধায় এগুলোকে ড্রেসিং এর দরকার হয় না ফলে নির্মাণকাজ দ্রুত করা যায়।

২.ব্লকগুলো হালকা বিধায় স্থানান্তর সহজ।

৩.এগুলো তুলনামূলক হালকা ওজনের হয় বিধায় ভিত্তিতে চাপ কম পড়ে এবং মাটির ভারবহন ক্ষমতা অপেক্ষাকৃত কম হলে নির্মাণ করা যায়।

৪.এগুলো ব্যবহারে নির্মাণসামগ্রীর সাশ্রয় হয়।

৫.এগুলো দিয়ে কম পুরুত্বের দেওয়াল নির্মাণ করা যায় ফলে ফ্লোর এরিয়া অধিক পাওয়া যায়।

৬.ব্লকের আকার বৃহত্তর হলে জোড়ার সংখ্যা কম হয়, ফলে মসলা কম লাগে।

৭.হলো ব্লকে ফাঁকা থাকায় এগুলো তাপ, শব্দ ও আর্দ্রতায় অন্তরক হিসেবে উত্তম।

৮.সর্বোপরি এগুলো আবহক্রিয়ায় কম আক্রান্ত হয়, তাই এগুলোর পৃষ্ঠে প্লাস্টারের দরকার হয় না।

৯.এগুলোর নির্মিত দেওয়াল সুন্দর দেখায়।

১০.কাজের চাহিদা অনুযায়ী হলো ব্লক বিভিন্ন আকার-আকৃতির তৈরি করা হয়।


হলো ব্লকের অসুবিধাসমূহ:-

১.হলো ব্লকের নির্মাণখরচ অপেক্ষাকৃত অধিক।

২.হলো ব্লক অপেক্ষাকৃত কম চাপ প্রতিরোধ করতে পারে।

৩.এগুলোর উপর বিম, গার্ডার ইত্যাদি সরাসরি স্থাপন করা যায় না।

৪.কাদার হলো ব্লক তৈরি, শুকানো, পোড়ানো ও কাঠামোতে সংস্থাপনে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।

৫.হলো ব্লক স্থাপনে দেওয়ালের নির্দিষ্ট স্থানের জন্য তৈরিকৃত ব্লক ঐ স্থানেই ব্যবহার হয় বিধায় ম্যাসনরি কাজের গতি কম হয়।

৬.কংক্রিট ব্লক কিউরিং (তিন হতে চার সপ্তাহ) এর সমাপ্তির পর ব্যবহার করতে হয় বিধায় নির্মাণে বিলম্ব ঘটতে পারে।

সিরামিক ইটের সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ

সিরামিক ইটের সুবিধাসমূহ:-

১.এগুলো দেখতে সুন্দর।

২.এগুলো ঈপ্সিত আকার-আকৃতির পাওয়া যায়।

৩.এগুলো আবহক্রিয়ায় আক্রান্ত হয় না।

৪.এগুলোকে প্লাস্টার করার দরকার হয় না।

৫.এগুলো অলস্কারমূলক কাজে ব্যবহার করা যায়।

৬.এগুলোর পুরুত্ব কম বিধায় কাঠামোতে স্থাপন সহজ।

সিরামিক ইটের অসুবিধাসমূহ:-

১.এগুলোর পুরুত্ব কম বিধায় জোড়া অনুভূতিক অধিক পড়ে।

২.এগুলোর কাজ ধীর।

৩.এগুলোর সংস্থাপন খরচ অধিক।

৪.বাজার মূল্য সাধারণ ইটের তুলনায় অধিক।

৫.অধিক পুরুত্বের দেওয়ালের ব্যয়সাপেক্ষ।

আশা করি আপনারা হলো ব্লক কি, টপিকটি বুঝতে পেরেছেন। যদি এই পোস্ট টি আপনার উপকারে আসে তা হলে শেয়ার করতে ভুলবেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন