চতুর্থ অধ্যায় : রক্ত ও সংবহন, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির জীববিজ্ঞান ২য় পত্র- বিস্তারিত

চতুর্থ অধ্যায় : রক্ত ও সংবহন, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির জীববিজ্ঞান ২য় পত্র:  আসসালামু আলাইকুম, আমি জানি আপনারা চতুর্থ অধ্যায় : রক্ত ও সংবহন, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির জীববিজ্ঞান ২য় পত্র বিষয়ে ধারণা নিতে অনলাইনে সার্চ করছেন। 

এখানে আপনি এই বিষয় সম্পর্কে সব জানতে পারবেন। তো আসুন আমরা জেনে নিই।

চতুর্থ অধ্যায় : রক্ত ও সংবহন, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির জীববিজ্ঞান ২য় পত্র

চতুর্থ অধ্যায় : রক্ত ও সংবহন, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির জীববিজ্ঞান ২য় পত্র

রক্ত কোন ধরনের টিস্যু?

উত্তরঃ তরল যোজক টিস্যু।


রক্তের প্রধান দুটি উপাদান কী কী?

উত্তরঃ রক্তের প্রধান দুটি উপাদান হলো– ১. রক্তরস বা প্লাজমা (৫৫%) এবং ২. রক্তকণিকা (৪৫%)।


একজন সুস্থ মানুষের দেহে কী পরিমাণ রক্ত থাকে?

উত্তরঃ একজন সুস্থ মানুষের দেহে গড়ে প্রায় ৫-৬ লিটার অর্থাৎ দেহের ওজনের প্রায় ৮%।


জীবদেহে সংবহনের প্রয়োজনীয়তা কি?

উত্তরঃ জীবদেহে সংবহনের প্রয়োজনীয়তা হল— পুষ্টিরস, শ্বাসবায়ু, হরমোন, বিপাকজাত রেচন পদার্থ প্রভৃতি পরিবহন করা।


রক্তকে যোজক কলা বলা হয় কেন?

উত্তরঃ রক্তকে যোজক কলা বলার কারণ-

(i) রক্ত মেসোডার্ম থেকে উৎপন্ন হয়,

(ii) রক্তে ধাত্রের পরিমাণ বেশি থাকে,

(iii) রক্ত বিভিন্ন অঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে।


হিমোগ্লোবিন কি?

উত্তরঃ হিমোগ্লোবিন এক প্রকার রঞ্জক পদার্থ, যার উপস্থিতিতে রক্তের বর্ণ লাল হয়।


লিম্ফোসাইট ও মনোসাইট এর কাজ কি?

উত্তরঃ লিম্ফোসাইট অনাক্রম্যতা রক্ষা করে এবং মনোসাইট ফ্যাগোসাইটোসিস পদ্ধতিতে জীবাণু ধ্বংস করে।


রক্তকণিকা কাকে বলে?

উত্তরঃ রক্তরসের মধ্যে ছড়ানো বিভিন্ন ধরনের কোষকে রক্তকণিকা বলে। রক্তকণিকা প্রধানত তিন রকম। যথা- লোহিত রক্তকণিকা বা এরিথ্রোসাইট, শ্বেত রক্তকণিকা বা লিউকোসাইট এবং অণুচক্রিকা বা থ্রম্বোসাইট।


রক্তরস কি?

উত্তরঃ রক্তরস হচ্ছে রক্তের হালকা হলুদ বর্ণের তরল অংশ। একে প্লাজমাও বলা হয়। এই রক্তরসে রক্তকণিকা ভাসমান অবস্থায় থাকে। রক্তরসে পানির পরিমাণ ৯২%। এছাড়াও রক্তরসে গ্লুকোজ, অ্যামাইনো এসিড, ফ্যাটি এসিড, গ্লিসারল, আমিষ (যেমন: অ্যালুবুমিন, ফিব্রিনোজেন), খনিজলবণ, হরমোন, ভিটামিন, ইউরিয়া, এন্টিবডি, অক্সিজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড ও অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ আছে।


রক্তরসের কাজ কী?

উত্তরঃ পরিপাকের পর খাদ্যসার রক্তরসে দ্রবীভূত হয়ে দেহের বিভিন্ন কলা ও অঙ্গে বাহিত হয়। টিস্যু থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে রেচনের জন্য বৃক্কে নিয়ে যায়। টিস্যুর অধিকাংশ কার্বন ডাইঅক্সাইড রক্তরসে বাইকার্বনেটরূপে দ্রবীভূত থাকে। অতি অল্প পরিমাণ অক্সিজেন এতে বাহিত হয়। লোহিত কণিকায় সংবদ্ধ হওয়ার আগে অক্সিজেন প্রথমে রক্তরসেই দ্রবীভূত হয়। হরমোন, এনজাইম, লিপিড প্রভৃতি বিভিন্ন অঙ্গে বহন করে। রক্তের অম্ল-ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করে।


ধমনিতন্ত্র কাকে বলে?

উত্তরঃ যেসব রক্তবাহিকার মাধ্যমে অক্সিজেন যুক্ত রক্ত সারা দেহে প্রবাহিত হয় তাকে ধমনিতন্ত্র বলে।


মুক্ত সংবহনতন্ত্র কী?

উত্তরঃ যে সংবহনতন্ত্রে রক্ত হৃদযন্ত্র থেকে নালিকা পথে বের হয়ে উন্মুক্ত দেহগহ্বরে প্রবেশ করে এবং দেহগহ্বর থেকে পুনরায় নালিকা পথে হৃদযন্ত্রে ফিরে আসে তার নাম মুক্ত সংবহনতন্ত্র। অর্থাৎ রক্ত সর্বদা রক্তবাহিকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় না। চিংড়ি, পতঙ্গ, মলাস্কা প্রভৃতি প্রাণীর দেহে এ ধরনের সংবহন দেখা যায়।


লোহিত কণিকার কাজ কী?

উত্তরঃ লোহিত কণিকার কাজ হলো–

১। লোহিত রক্তকণিকার হিমোগ্লোবিন ফুসফুস থেকে দেহকোষে অধিকাংশ O2 এবং সামান্য পরিমাণ CO2 পরিবহন করে।

২। রক্তের সান্দ্রতা (viscocity) রক্ষা করে।

৩। এগুলোর হিমোগ্লোবিন ও অন্যান্য অন্তঃকোষীয় বস্তু বাফাররূপে রক্তে অম্ল-ক্ষারের সাম্য রক্ষা করে।

৪। প্লাজমা ঝিল্লিতে অ্যান্টিজেন প্রোটিন সংযুক্ত থাকে যা মানুষের রক্ত গ্রুপিংয়ের জন্য দায়ী।

৫। এসব কণিকা রক্তে বিলিরুবিন ও বিলিভার্ডিন উৎপাদন করে।

শ্বেত রক্ত কণিকার কাজ কী?

উত্তরঃ শ্বেত রক্ত কণিকার কাজ হলো–

১। মনোসাইট ও নিউট্রোফিল ফ্যাগোসাইটোসিস পদ্ধতিতে জীবাণু ভক্ষণ করে ধ্বংস করে।

২। লিম্ফোসাইটগুলো অ্যান্টিবডি সৃষ্টি করে রোগ প্রতিরোধ করে (এজন্য এদের আণুবীক্ষণিক সৈনিক বলে)।

৩। বেসোফিল হেপারিন তৈরি করে যা রক্তনালির অভ্যন্তরে রক্ততঞ্চন রোধ করে।

৪। দানাদার লিউকোসাইট হিস্টামিন সৃষ্টি করে যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

৫। নিউট্রোফিলের বিষাক্ত দানা জীবাণু ধ্বংস করে।


অনুচক্রিকার কাজ কী?

উত্তরঃ অনুচক্রিকার কাজ হলো–

১। ক্ষতস্থানে রক্ত তঞ্চন ঘটায় এবং হিমোস্ট্যাটিক প্লাগ (hemostatic plug) গঠন করে রক্তক্ষরণ বন্ধ করে।

২। রক্তনালির ক্ষতিগ্রস্থ এন্ডোথেলিয়াল আবরণ পুনর্গঠন করে।

৩। সেরাটোনিন নামক রাসায়নিক পদার্থ উৎপন্ন করে যা রক্তনালির সংকোচন ঘটিয়ে রক্তপাত হ্রাস করে।

৪। ফ্যাগোসাইটোসিস পদ্ধতিতে কার্বন কণা, ইমিউন কমপ্লেক্স ও ভাইরাসকে ভক্ষণ করে।


অ্যানাজাইনা কী?

উত্তরঃ হৃদপেশি যখন O2 সমৃদ্ধ পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ পায়না তখন বুক নিষ্পেষিত হচ্ছে বা দম বন্ধ হয়ে আসছে এমন মারাত্মক অস্বস্তি অনুভূতি হলে সে ধরনের বুক ব্যথাকে অ্যানজাইনা বলে।


পেসমেকার কী? (What is pacemaker?)

উত্তরঃ হৃৎপিন্ডে ডান অ্যাট্রিয়াম-প্রাচীরের উপর দিকে অবস্থিত, বিশেষায়িত কার্ডিয়াক পেশিগুচ্ছে গঠিত ও স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রে নিয়ন্ত্রিত একটি ছোট অংশ যা বৈদ্যুতিক তরঙ্গ প্রবাহ ছড়িয়ে দিতে হৃদস্পন্দন সৃষ্টি করে এবং স্পন্দনের ছন্দময়তা বজায় রাখে তাকে পেসমেকার বলে।


এনজিওপ্লাস্টি কী? (What is angioplasty?)

উত্তরঃ বড় ধরনের অস্ত্রোপচার না করে হৃৎপিন্ডের সংকীর্ণ লুমেনযুক্ত বা রূদ্ধ হয়ে যাওয়া করোনরি ধমনী পুনরায় প্রশস্ত ল্যুমেনযুক্ত বা উন্মুক্ত করার পদ্ধতিকে এনজিওপ্লাস্টি (angio = রক্তবাহিকা + plasty = পুননির্মাণ) বলে। এনজিওপ্লাস্টির উদ্দেশ্য হচ্ছে সরু বা বন্ধ হয়ে যাওয়া লূমেনের ভেতর দিয়ে হৃৎপিন্ডের পর্যাপ্ত O2-সরবরাহ নিশ্চিত করে হৃৎপিন্ড ও দেহকে সচল রাখা। বুকে ব্যথা (অ্যানজাইনা), হার্ট ফেইলিউর, হার্ট অ্যাটাক প্রভৃতি মারাত্মক রোগ থেকে মুক্তির সহজ উপায় এনজিওপ্লাস্টি।


হার্ট ফেইলিউর কী?

উত্তরঃ হৃৎপিন্ড যখন দেহের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত রক্তের যোগান দিতে পারে না তখন এ অবস্থাকে হার্ট ফেইলিউর বলে। অনেক সময় হৃৎপিন্ড রক্তে পরিপূর্ণ না হতে পারায়, কখনওবা হৃদপ্রাচীরে যথেষ্ট শক্তি না থাকায় এমনটি হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে উভয় সমস্যাই একসঙ্গে দেখা যায়। অতএব হার্ট ফেইলিউর মানে হৃৎপিন্ড বন্ধ হয়ে গেছে, বা থেমে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে তা নয়। তবে হার্ট ফেইলিউরকে হৃৎপিন্ডের একটি মারাত্মক অবস্থা বিবেচনা করে সুচিকিৎসার কথা বলা হয়েছে।


হার্ট অ্যাটাক কী?

উত্তরঃ পর্যাপ্ত অক্সিজেন-সমৃদ্ধ রক্ত সরবরাহের অভাবে কার্ডিয়াক পেশির ধ্বংস বা মরে যাওয়াকে হার্ট অ্যাটার্ক বলে। করোনারি ধমনির অন্তর্গাত্রে (endothelium) উচ্চমাত্রার কোলেস্টরল জমে ধমনির অন্তঃস্থ গহ্বর বন্ধ হয়ে গেলে হৃৎপেশিতে পুষ্টি ও অক্সিজেন-সমৃদ্ধ রক্তের সরবরাহও বন্ধ হয়ে যায়, ফলে হৃৎপেশি ধ্বংস হয় বা মরে যায় এবং হার্ট অ্যাটাকের মতো মাতারাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। হার্ট অ্যাটাকের অপর নাম মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশন (myocardial infraction; মায়াকার্ডিয়াল অর্থ হৃৎপেশি, আর ইনফ্রাকশন অর্থ অক্সিজেনের অভাবে দম বন্ধ হওয়া)।


হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় কেন?

উত্তরঃ ভয় পেলে পরিস্থিতি সামলাতে মস্তিষ্ক তৎক্ষণাৎ সক্রিয় হয় ও মস্তিষ্ককে অতিরিক্ত রক্ত সঞ্চালন ঘটে। ফলে হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়।


আশা করি চতুর্থ অধ্যায় : রক্ত ও সংবহন, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির জীববিজ্ঞান ২য় পত্রএই বিষয়টি আপনি বুঝতে পেরেছেন। যদি এই পোস্টটি থেকে কিছুটা উপকার হয়ে থাকে, তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। "ধন্যবাদ"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন