স্থূল সংকেত ও আণবিক সংকেত কি?- রসায়ন [Update]

স্থূল সংকেত ও আণবিক সংকেত কি?: আসসালামু আলাইকুম, আমি মিমিয়া, আমি তোমাদের chemistry আপু। আমি জানি তোমরা স্থূল সংকেত ও আণবিক সংকেত কি? বিষয়ে ধারণা নিতে অনলাইনে সার্চ করেছ। 

তাই তোমাদের আপু, তোমাদের জন্য নিয়ে এসেছে এই  কাঙ্খিত বিষয়টি।স্থূল সংকেত ও আণবিক সংকেত কি?

স্থূল সংকেত ও আণবিক সংকেত কি?

স্থূল সংকেতঃ 

কোন যৌগের অণুতে বিদ্যামান মৌলের পরমাণুর সংখ্যা, যে ক্ষুদ্রতম পূর্ণসংখ্যার অনুপাতে আছে, তার সংক্ষিপ্ত প্রকাশকে ঐ যৌগের স্থূল সংকেত বলে। স্থূল সংকেত দ্বারা যৌগের অণুতে বিদ্যামান মৌলের পরমাণুসমূহের অনুপাত সংখ্যা প্রকাশ করে। কিন্তু পরমাণুসমূহের প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ করে না।

যেমনঃ বেনজিনের স্থূল সংকেত CH. পানির স্থূল সংকেত H₂O; মিথেনের স্থূল সংকেত CH₄ ; অ্যাসিটিলিনের স্হূূল সংকেত CH.

স্থূল সংকেত নির্ণয়ের নিয়মঃ

১. কোন যৌগের স্থূল সংকেত নির্ণয়ের জন্য যৌগের উপাদান মৌলসমূহের শতকরা সংযুতি জানা প্রয়োজন। 

২. যৌগের উপাদান মৌল গুলির শতকরা পরিমাণ গুলিকে যোগ করে, ঐ যোগফল 100 বা এর কাছাকাছি কোন সংখ্যা হয় কিনা দেখতে হবে। যদি যোগফল 100 অপেক্ষা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম দেখা যায় তখন বুঝতে হবে অন্য কোন মৌলের পরিমান সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি। প্রশ্নে কোন মৌলের উল্লেখ না থাকলে অবশিষ্ট শতকরা পরিমাণ অক্সিজেন মৌলের হবে।

৩. যৌগের প্রতিটি উপাদান মৌলসমূহের শতকরা সংযুতিকে তাদের নিজ নিজ পারমাণবিক ভর দ্বারা ভাগ করতে হয়। যেমনঃ বেনজিনে কার্বন ও হাইড্রোজেনের শতকরা সংযুতি যথাক্রমে 92.31% এবং 7.69%. এরপর কার্বনের শতকরা সংযুতিকে কার্বনের পারমাণবিক ভর 12 দ্বারা এবং হাইড্রোজেনের শতকরা সংযুতিকে হাইড্রোজেনের পারমাণবিক ভর 1 দ্বারা ভাগ করতে হবে।

C = 92.31 / 12 = 7.69 

H = 7.69 / 1 = 7.69

৪. প্রাপ্ত ভাগফল সমূহের মধ্যে ক্ষুদ্রতম ভাগফল দ্বারা প্রত্যেক ভাগফলকে পুনরায় ভাগ করতে হবে। মূলত এই ভাগফল যৌগের অণুতে বিদ্যামান পরমাণুসমূহের অনুপাত সংখ্যা প্রকাশ করে। যেমনঃ উপরের ভাগফল দুটি সমান। সেজন্য 7.69 দ্বারা প্রত্যেক ভাগফলকে ভাগ করি।

C = 7.69 / 7.69 = 1

H = 7.69 / 7.69 = 1

এবার বেনজিনে কার্বন ও হাইড্রোজেন এর অনুপাত 1:1. 

৫. ভাগফল গুলি ভগ্নাংশ হলে নিকটতম পূর্ণ সংখ্যায় পরিণত করার জন্য প্রয়োজনে যে কোন সংখ্যা দিয়ে সব ভাগফল গুলিকে গুণ করতে হবে।

৬. অনুপাত সংখ্যাগুলিকে মৌলসমূহের প্রতীকের ডান পাশের নিচে বসিয়ে দিলেই স্থূল সংকেত তৈরি  হবে। তবে অনুপাত সংখ্যা এক হলে সেটি লেখার প্রয়োজন নেই।

সুতরাং, বেনজিনের স্থূল সংকেত C₁H₁ = CH.

আণবিক সংকেতঃ 

কোন যৌগের অণুতে কি কি মৌল আছে এবং প্রতিটি মৌলের পরমাণুর প্রকৃত সংখ্যার সংক্ষিপ্ত প্রকাশকে যৌগটির আণবিক সংকেত বলে।

যেমনঃ সালফিউরিক এসিডে দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু, একটি সালফার পরমাণু ও চারটি অক্সিজেন পরমাণু বিদ্যামান। সুতরাং সালফিউরিক এসিডের আণবিক সংকেত H₂SO₄.

 আণবিক সংকেত নির্ণয়ের নিয়মঃ

১. কোন যৌগের আণবিক সংকেত নির্ণয়ের জন্য প্রথমে যৌগের উপাদান মৌল সমূহের শতকরা সংযুতি, পারমাণবিক ভর ও যৌগের আণবিক ভর জানা প্রয়োজন।

২. মৌলের শতকরা সংযুতি ও পারমাণবিক ভর থেকে যৌগের স্থূল সংকেত নির্ণয় করা হয়।

৩. যৌগের আণবিক সংকেত =(স্থূল সংকেত)x n.   n = 1,2,3------ ইত্যাদি।

৪. যৌগের আণবিক সংকেতের ভরকে, স্থূল সংকেতের ভর দ্বারা ভাগ করে n এর মান নির্ণয় করা হয়।

n = ( আণবিক সংকেতের ভর) ÷ (স্থূল সংকেতের ভর)

৫. শেষে n এর মান দ্বারা স্থূল সংকেতের প্রত্যেক মৌলের পরমাণুর সংখ্যাকে গুণ করলে আণবিক সংকেত পাওয়া যায়।

যেমনঃ বেনজিনের স্থূল সংকেত CH. বেনজিনের স্থূল সংকেতের ভর 13 এবং আণবিক সংকেতের ভর 78. 

বেনজিনের আণবিক সংকেত =(স্থূল সংকেত)x n. 

n = (বেনজিনের আণবিক ভর) ÷ (বেনজিনের স্থূল সংকেতের ভর) = 78 ÷ 13 = 6.

বেনজিনের আণবিক সংকেত = (CH)₆ = C₆H₆.

আণবিক সংকেতের তাৎপর্যঃ

আণবিক সংকেতের দুই ধরনের তাৎপর্য রয়েছে। 

১. গুণগত তাৎপর্য 

২. পরিমাণগত তাৎপর্য।

১.গুণগত তাৎপর্যঃ

ক) কোন সংকেত দ্বারা একটি নির্দিষ্ট যৌগকে বোঝায়।

খ) আণবিক সংকেত দ্বারা যৌগটি কি কি মৌল দ্বারা গঠিত তা বোঝায়।

২. পরিমাণগত তাৎপর্যঃ

ক). কোন যৌগের প্রতিটি অণুতে উপাদান মৌলের কয়টি পরমাণু আছে আণবিক সংকেত তা নির্দেশ করে।

খ). আণবিক সংকেত দ্বারা যৌগের আণবিক ভর জানা যায়।

গ). কোন যৌগের সংকেত যৌগটিতে বিদ্যমান মৌল সমূহের আপেক্ষিক ভর নির্দেশ করে।

ঘ). রাসায়নিক সমীকরণে কোন আণবিক সংকেত সংশ্লিষ্ট যৌগের একটি অণুকে বোঝায়।

স্থূল সংকেত ও আণবিক সংকেতের মধ্যে পার্থক্যঃ

১. স্থূল সংকেত যৌগের অণুতে বিদ্যামান মৌলের বিভিন্ন পরমাণু সংখ্যার ক্ষুদ্রতম অনুপাত প্রকাশ করে। 

যেমনঃ গ্লুকোজের স্থূল সংকেত CH₂O থেকে জানা যায় গ্লুকোজ অণুতে কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন পরমাণু সংখ্যার অনুপাত 1:2:1. 

অপরদিকে, আণবিক সংকেত যৌগের অণুতে বিদ্যামান পরমাণুসমূহের প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ করে। 

যেমনঃ গ্লুকোজের আণবিক সংকেত C₆H₁₂O₆. যেখানে 6 টি কার্বন, 12 হাইড্রোজেন ও 6 টি অক্সিজেন পরমাণু বিদ্যামান থাকে।

২. যৌগের স্থূল সংকেত নির্ণয় করতে এর শতকরা সংযুতি ও পারমাণবিক ভর জানা প্রয়োজন। কিন্তু যৌগের আণবিক সংকেত নির্ণয় ক্ষেত্রে এর স্থূল সংকেত ও আণবিক ভর উভয় জানা প্রয়োজন।

৩. যৌগের স্থূল সংকেত কোন কোন ক্ষেত্রে আণবিক সংকেতের সমান হয়। 

যেমনঃ মিথেনের স্থূল সংকেত CH₄. যা এর আণবিক সংকেত CH₄ এর সমান। 

অপরদিকে, যৌগের আণবিক সংকেত এর স্থূল সংকেতের সমান অথবা এর কোন সরল গুণিতকের সমান। 

যেমনঃ মিথেনের আণবিক সংকেত এর স্থূল সংকেতের সমান  CH₄. বেনজিনের স্থূল সংকেত CH. কিন্তু বেনজিনের আণবিক সংকেত, স্থূল সংকেত CH এর ছয়গুন। অর্থাৎ (CH)₆ = C₆H₆.

৪. স্থূল সংকেত শুধু যৌগের ক্ষেত্রে হতে পারে। কিন্তু আণবিক সংকেত যৌগ বা মৌল উভয় ধরনের পদার্থের হতে পারে।

৫. একই স্থূল সংকেত একাধিক যৌগের হতে পারে। 

যেমনঃ বেনজিন ও অ্যাসিটিলিন এর স্থূল সংকেত CH. 

অপরদিকে, সমানু ব্যতীত একটি আণবিক সংকেত কেবল একটি যৌগিক হয়ে থাকে। 

যেমনঃ C₆H₆ শুধু বেনজিনের আণবিক সংকেত।

বন্ধুরা আশা করি এই পোস্টটি তোমাদের অনেক ভালো লেগেছে। এর সাথে স্থূল সংকেত ও আণবিক সংকেত কি? বিষয়টিও তোমরা বুঝতে পেরেছ। যদি এই পোস্টটি থেকে কিছুটা হলেও উপকৃত হও, তাহলে তোমাদের বন্ধুর সাথে শেয়ার করতে ভুলবে না। ধন্যবাদ



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন