করোনারি বাইপাস সার্জারি- বিস্তারিত

করোনারি বাইপাস সার্জারি:  আসসালামু আলাইকুম, আমি জানি আপনারা করোনারি বাইপাস সার্জারি বিষয়ে ধারণা নিতে অনলাইনে সার্চ করছেন। 

এখানে আপনি এই বিষয় সম্পর্কে সব জানতে পারবেন। তো আসুন আমরা জেনে নিই।

করোনারি বাইপাস সার্জারি

করোনারি বাইপাস সার্জারি

এক বা একাধিক করোনারি ধমনির ল্যুমেন (গহ্বর) রূদ্ধ হয়ে গেলে হৃৎপিন্ডে রক্ত সরবরাহ অব্যাহত রাখতে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দেহের অন্য অংশ থেকে (যেমন-পা থেকে) একটি সুস্থ রক্তবাহিকা কেটে এনে রূদ্ধ ধমনির পাশে স্থাপন করে রক্ত সরবরাহের যে বিকল্প পথ সৃষ্টি করা হয় তাকে করোনারি বাইপাস বলে। করোনারি বাইপাস সৃষ্টির সামগ্রিক অস্ত্রোপচার প্রক্রিয়াটিকে করোনারি বাইপাস সার্জারি (Coronary bypass surgery) বলা হয়।


করোনারি হৃদরোগ সৃষ্টির প্রধানতম কারণ হচ্ছে করোনারি ধমনির রূদ্ধতা। এর মূল কারণ ধমনির অন্তঃস্থ প্রাচীর ঘিরে ক্রমশ সঞ্চিত হওয়া উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল জাতীয় হলদে চবি পদার্থ। ধমনি প্রাচীরের এন্ডোথেলিয়ামে এগুলো জমা হয়। পরে এসব পদার্থে তন্তু পুঞ্জিভূত হয়ে শক্ত হতে শুরু করে এবং চুনময় পদার্থে পরিণত হয়। এ প্রক্রিয়াকে আর্টারিওস্ক্লেরোসিস (Arteriosclerosis) বলে। আর পুঞ্জীভূত পদার্থগুলোকে বলে অ্যাথেরোমেটাস প্লাক্স (Atheromatous plaques)। 


প্লাক্সের আধিক্যের কারণে ধমনিপথ সংকীর্ণ হয়ে পড়ে, রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয় এবং এক সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তখন হৃৎপেশি O2- সমৃদ্ধ রক্ত না পেলে হার্ট ফেইলিউর, হার্ট অ্যাটাক প্রভৃতি মারাত্মক জটিলতার সৃষ্টি হয়। জীবনের প্রতি হুমকিস্বরূপ এসব জটিলতা এড়াতে O2-সমৃদ্ধ রক্ত হৃৎপেশিতে সরবরাহ করার বিকল্প পথের সৃষ্টি করতে হয়। বাইপাস সড়কের মতো হৃৎপিন্ডে বাইপাস ধমনি নির্মাণের জটিল প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হতে হয়।

ধূমপান, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি ও ডায়াবেটিস প্রভৃতি ধমনি গাত্রে প্লাক জমার কাজ ত্বরান্বিত করে। তাছাড়া, ৪৫ বছরের বেশি বয়সি পুরুষ ও ৫৫ বছরের বেশি বয়সি নারীর ক্ষেত্রে কিংবা পরিবারের ইতিহাসে যদি করোনারি ধমনি সংক্রান্ত ব্যাধির নজির থেকে থাকে তাহলে আরও কম বয়সে করোনারি বাইপাস করার ঝুকি দেখা দিতে পারে।

যখন করোনারি ধমনির ল্যুমেন ৫০-৭০% সংকীর্ণ হয় তখন থেকেই O2-সমৃদ্ধ রক্তের প্রবাহ হৃৎপেশিতে কমে যায়। বুকে ব্যথা অনুভূত হয়। প্লাকের চূড়ায় যদি রক্ত জমাট বাঁধে তাহলে পরিস্থিতি হার্ট অ্যাটাকের দিকে চলে যায়।


ধমনির ল্যুমেন যদি ৯০-৯৯ % সংকীর্ণ হয়ে যায় তখন অস্থির অ্যানজাইনা (Unstable angina) তুরান্বিত হয়। এমন অবস্থায় করোনারি বাইপাস কার্যক্রম গ্রহণ করা ছাড়া উপায় থাকে না।


করোনারি বাইপাস একটি জটিল প্রক্রিয়া। রোগ শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ায় হৃৎচিকিৎসক প্রথমে করোনারি ধমনির রোগের সঠিক অবস্থান, ধরন ও ব্যাপকতা নির্ণয় করেন। পরবর্তী ধাপে রোগীর হৃৎপিন্ড, বয়স, লক্ষণের ব্যাপকতা, অন্যান্য অসুখ-বিসুখের অবস্থা ও জীবনযাত্রা পদ্ধতি বিবেচনা করে হৃদ ও শল্যচিকিৎসক চিকিৎসা পদ্ধতি সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত নেবেন। 


রূদ্ধ করোনারি ধমনিকে এড়িয়ে ভিন্নপথ নির্মাণ করতে বুক, হাত, পা ও তলপেট থেকে ধমনি সংগ্রহ করা হয়। কয়টি করাোনারি ধমনি বাইপাস করতে হবে তার উপর নির্ভর করে অস্ত্রোপচারের সময়কাল। সাধারণত ৩-৫ ঘন্টা সময়ের মধ্যে বাইপাস কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। এক সপ্তাহের মধ্যে রোগী হাসপাতাল ত্যাগ করতে পারেন। কোন জটিলতা না থাকলে ২ মাসের মধ্যে রোগী সুস্থ হয়ে যায়। এরপর থেকে রোগীকে নিয়মিত চেকআপের মধ্যে থাকতে হয়।


বিধিনিষেধ


বাইপাস সার্জারির পর রোগীকে বেশকিছু বিধিনিষেধ মেনে চলতে হয়। যেমন- ধূমপান ত্যাগ; কোলেস্টেরলের চিকিৎসা; উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ; ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ; নিয়মিত নির্ধারিত ব্যায়াম: স্বাস্থ্যসম্মত ওজন বজায় রাখা; হৃদ-বান্ধব ভোজনে অভ্যস্ত হওয়া; চাপ ও রাগ নিয়ন্ত্রণে আনা; নির্ধারিত ওষুধ সেবন; এবং চিকিৎসকের সঙ্গে নিয়মিত দেখা করা।


আশা করি করোনারি বাইপাস সার্জারিএই বিষয়টি আপনি বুঝতে পেরেছেন। যদি এই পোস্টটি থেকে কিছুটা উপকার হয়ে থাকে, তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। "ধন্যবাদ"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন