ভৌত ও রাসায়নিক পরিবর্তন- রসায়ন [Update]

ভৌত ও রাসায়নিক পরিবর্তন: আসসালামু আলাইকুম, আমি মিমিয়া, আমি তোমাদের chemistry আপু। আমি জানি তোমরা ভৌত ও রাসায়নিক পরিবর্তন বিষয়ে ধারণা নিতে অনলাইনে সার্চ করেছ। 

তাই তোমাদের আপু, তোমাদের জন্য নিয়ে এসেছে এই  কাঙ্খিত বিষয়টি।

ভৌত ও রাসায়নিক পরিবর্তন


ভৌত পরিবর্তন

যে পরিবর্তনের ফলে পদার্থের শুধু বাহ্যিক অবস্থার পরিবর্তন হয়। কিন্তু পদার্থের গঠন অপরিবর্তিত থাকে। তাকে ভৌত পরিবর্তন বলে। ভৌত পরিবর্তনের ফলে কোন নতুন পদার্থের সৃষ্টি হয় না।

ভৌত পরিবর্তনের  উদাহরণ

১. পানি স্বাভাবিক তাপমাত্রায় তরল অবস্থায় থাকে। কিন্তু পানির তাপমাত্রা পরিবর্তন করে 0º সেলসিয়াস এ নিয়ে আসলে পানি তরল থেকে কঠিনে পরিণত হয়। অর্থাৎ বরফ তৈরি করে। আবার, বরফের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করলে, বরফ গলে পানিতে পরিণত হয়। আবার পানির তাপমাত্রা 100º সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি করলে পানি ফুটতে শুরু করে। অর্থাৎ পানি তরল অবস্থা থেকে গ্যাসীয় অবস্থায় বা জলীয় বাষ্পে রূপান্তর ঘটে। জলীয়বাষ্পকে ঠান্ডা করলে তা আবার পানিতে পরিণত হয়। বরফ, পানি ও জলীয় বাষ্প একই পদার্থের তিনটি ভিন্ন ভৌত অবস্থা। কিন্তু বরফ, পানি ও জলীয় বাষ্পে পানির রাসায়নিক গঠন অপরিবর্তিত থাকে।  অর্থাৎ এ তিন অবস্থাতেই  একটি  অক্সিজেন পরমাণু ; দুটি হাইড্রোজেন পরমাণুর সাথে সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ থাকে। সুতরাং পানি হতে বরফ বা জলীয় বাষ্প তৈরি হওয়া পদার্থের একটি ভৌত পরিবর্তন।

 ২. মোমের দহন একটি ভৌত পরিবর্তন। মোমের সলতেতে আগুন জ্বালালে তাপে কিছু মোম গলে তরল হয়। এই তরল মোম, মোমের  গা বেয়ে নিচের দিকে গড়িয়ে পড়ে। তরল মোমকে ঠান্ডা করলে তা আবার কঠিন মোমে পরিণত হয়। সুতরাং এটি একটি ভৌত পরিবর্তন।

৩. চিনির দানাকে গুড়া করলে বড় দানা হতে ক্ষুদ্র দানার সৃষ্টি হয়। কিন্তু চিনির অন্য কোন পদার্থে রূপান্তর ঘটে না। মুখে দিলে দেখা যায় ছোট-বড় উভয় প্রকার চিনির দানা সমান মিষ্টি। সুতরাং বড় দানাকে গুড়া করে ছোট দানা তৈরি করা পদার্থের একটি ভৌত পরিবর্তন।

৪. একটি লোহার টুকরাকে চুম্বক দ্বারা ঘর্ষণ করলে লোহার টুকরাটি চুম্বুকত্ব প্রাপ্ত হয়। কিন্তু এ সময় লোহা অন্য কোন পদার্থে পরিণত হয় না। আবার চুম্বুকত্ব প্রাপ্ত লোহার টুকরাকে উত্তপ্ত করলে তা চুম্বকত্ব হারিয়ে আবার সাধারণ লোহায় পরিণত হয়। সুতরাং এটি একটি ভৌত পরিবর্তন।

৫. খাবার লবণকে পানিতে দ্রবীভূত করলে লবণ অদৃশ্য হয়ে যায়। লবণের দ্রবণকে বাষ্পীভূত করলে পানি সহজেই বাষ্পে পরিণত হয়ে উড়ে যায় এবং লবণকে পূর্বের অবস্থায় ফিরে পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে লবণের শুধু অবস্থাগত পরিবর্তন ঘটে। কিন্তু লবনের আণবিক গঠনের কোন পরিবর্তন হয় না। সুতরাং এটি একটি ভৌত পরিবর্তন।

রাসায়নিক পরিবর্তনঃ 

যে পরিবর্তনের ফলে এক বা একাধিক বস্তু তার নিজস্ব সত্তা হারিয়ে সম্পূর্ণ নতুন ধর্ম বিশিষ্ট এক বা একাধিক বস্তুতে পরিণত হয়, তাকে রাসায়নিক পরিবর্তন বলে। অন্য কথায় যে পরিবর্তনে বস্তুর রাসায়নিক গঠনের পরিবর্তন হয় তাকে রাসায়নিক পরিবর্তন বলে। প্রতিটি রাসায়নিক বিক্রিয়ায় রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে।

রাসায়নিক পরিবর্তনের উদাহরণ

১. এক টুকরো লোহাকে দীর্ঘদিন বাতাসে রেখে দিলে তার উপর মরিচার সৃষ্টি হয়। লোহার সাথে বাতাসে বিদ্যমান অক্সিজেন ও জলীয়বাষ্প বিক্রিয়া করে পানিযুক্ত ফেরিক অক্সাইড উৎপন্ন করে। যা মরিচা নামে পরিচিত। মরিচার ধর্ম লোহা, অক্সিজেন ও জলীয়বাষ্প হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন। সুতরাং এটি একটি রাসায়নিক পরিবর্তন।

২. সামান্য পরিমাণে এসিড যুক্ত পানিতে বিদ্যুৎ প্রবাহ চালনা করলে পানি বিশ্লেষিত হয় সম্পূর্ণ ভিন্ন ধর্মী পদার্থ অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন গ্যাসে পরিণত হয়। সুতরাং পানির তড়িৎ বিশ্লেষণ একটি রাসায়নিক পরিবর্তন।

৩. একটি দিয়াশলাই এর কাঠিকে বারুদের উপর ঘর্ষণ করলে কাঠিটি দহনের ফলে আলো ও তাপ উৎপন্ন হয় এবং কিছু ছাই অবশিষ্ট থাকে। কোন অবস্থাতেই কাঠিটি পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায় না। সুতরাং এটি একটি রাসায়নিক পরিবর্তন।

৪. একটি মোমবাতি জ্বলার সময় তাপে কিছু মোম গলে যায়। এটি ভৌত পরিবর্তন। কিন্তু অধিকাংশ মোম বাতাসের অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে কার্বন ডাই অক্সাইড ও জলীয় বাষ্প উৎপন্ন করে। কার্বন ডাই অক্সাইড ও জলীয় বাষ্পের ধর্ম মোমের ধর্ম থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। সুতরাং মোমবাতির দহন একটি রাসায়নিক পরিবর্তন।

৫. জিংক ও লঘু সালফিউরিক এসিডের বিক্রিয়ায় ভিন্নধর্মী জিংক সালফেট ও হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন হয়। যা একটি রাসায়নিক পরিবর্তন।

ভৌত ও রাসায়নিক পরিবর্তনের মধ্যে পার্থক্যঃ

১. ভৌত পরিবর্তনের ফলে কোন নতুন পদার্থের সৃষ্টি হয় না।

অপরদিকে, রাসায়নিক পরিবর্তনের ফলে সম্পূর্ণ নতুন ধর্ম বিশিষ্ট পদার্থের সৃষ্টি হয়।

২. ভৌত পরিবর্তনের ফলে পদার্থের ধর্মের পরিবর্তন হয় না। 

কিন্তু, রাসায়নিক পরিবর্তনের ফলে পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক উভয় ধর্মের পরিবর্তন হয়।

৩. ভৌত পরিবর্তনের ফলে পদার্থের অণু গঠনের কোন পরিবর্তন হয় না। 

অপরদিকে, রাসায়নিক পরিবর্তনের ফলে পদার্থের গঠন পরিবর্তনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ নতুন অণুর সৃষ্টি হয়।

৪. ভৌত পরিবর্তনের ফলে পদার্থের রাসায়নিক সংযুক্তির পরিবর্তন হয় না। 

অপরদিকে, রাসায়নিক পরিবর্তনের ফলে পদার্থের রাসায়নিক সংযুক্তির পরিবর্তন হয়।

৫. ভৌত পরিবর্তনে পদার্থের তাপশক্তি শোষণ বা উৎপন্ন হতে পারে বা নাও হতে পারে। 

কিন্তু রাসায়নিক পরিবর্তনের ফলে পদার্থের তাপশক্তি শোষণ ও উৎপন্ন অবশ্যই হবে।

৬.  ভৌত পরিবর্তন পদার্থের অস্থায়ী পরিবর্তন ; কিন্তু রাসায়নিক পরিবর্তন পদার্থের স্থায়ী পরিবর্তন ঘটে।

বন্ধুরা আশা করি এই পোস্টটি তোমাদের অনেক ভালো লেগেছে। এর সাথে ভৌত ও রাসায়নিক পরিবর্তন বিষয়টিও তোমরা বুঝতে পেরেছ। যদি এই পোস্টটি থেকে কিছুটা হলেও উপকৃত হও, তাহলে তোমাদের বন্ধুর সাথে শেয়ার করতে ভুলবে না। ধন্যবাদ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন