ভ্রমণ সাহিত্যের স্বরূপ উদ্ঘাটন করে বাংলা ভ্রমণ সাহিত্যের উদাহরণ দাও - আসল ব্যাখা

ভ্রমণ সাহিত্যের স্বরূপ উদ্ঘাটন করে বাংলা ভ্রমণ সাহিত্যের উদাহরণ দাও: আসসালামু আলাইকুম ভাই ও বোনেরা আপনারা কেমন আছেন? আশা করি ভালো আছেন, আমিও আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি, আপনাদের স্বাগতম জানাচ্ছি লাখ পড়া মাইমুনা তে। আমার নাম মাইমুনা, আজকে আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা আপনাদের বিভিন্ন জায়গায় লাগতে পারে। 

আমি জানি আপনারা “ভ্রমণ সাহিত্যের স্বরূপ উদ্ঘাটন করে বাংলা ভ্রমণ সাহিত্যের উদাহরণ দাও” বিষয়ে ধারণা নিতে অনলাইনে খোজাখুঝি করছেন।আর আপনি এখন একদম সঠিক পোস্ট এ আছেন। এখানে আপনি এই বিষয়টি সম্পর্কে সব ভালো ভাবে জানতে পারবেন। 

ভ্রমণ সাহিত্যের স্বরূপ উদ্ঘাটন করে বাংলা ভ্রমণ সাহিত্যের উদাহরণ দাও

ভ্রমণ সাহিত্যের স্বরূপ উদ্ঘাটন করে বাংলা ভ্রমণ সাহিত্যের উদাহরণ দাও

“আমি, চঞ্চল হে, সুদূরের পিয়াসী...।”

কবিগুরুর এই অমর বাণীর মধ্যেই নিহিত আছে যে মানুষ আজন্ম ভ্রমণের পূজারি। চোখে দেখা পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, প্রকৃতির একঘেয়েমি ভাব যখন বুভুক্ষু তৃন্মার্ত মনকে ক্লান্ত অবসন্ন করে তোলে তখন মন ডুকরে কেঁদে মরে, আকুল কণ্ঠে ভরে বলতে চায় “হেথা নয় হেথা নয় অন্য কোথা অন্য কোনখানে।" সকল বন্ধন ছিন্ন করে মন বিহঙ্গ পাখা মেলে উড়ে চলে যেতে চায় কোনো এক অজানা অচেনা দূর দেশে, যেখানে অন্তত প্রাত্যহিক জীবনের অবসন্নতা দূরীভূত করে কিছুটা স্বস্তি এনে দেবে।

তাই মানুষ তার কর্মময় জীবনের মাঝে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়ে দেশ ভ্রমণে, সঞ্চয় করতে থাকে নানান অভিজ্ঞতা। এই পর্যটন কেবলমাত্র এ কালের নয়। সেকালেও মেগাস্থিনিস, হিয়েন সাঙ, ফা-হিয়েনের মতো দার্শনিক পরিব্রাজকরা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিল বাহিরে, পৃথিবীর আঙিনায়। কারণ তাঁরা জানতো “বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি।” দেশ বিদেশে কত রাজধানী, নগর মানুষের কীর্তি, কত নদ-নদী সিন্ধু পর্বত মরুভূমি কত গাছপালা অদেখাই থেকে গেছে তার ইয়ত্তা নেই। জীবনের পরিধি সীমিত। তাই বেঁচে থাকতে সেগুলি স্বচক্ষে দেখে আনন্দ উপভোগ করাই ছিল তাদের ভ্রমণের মুখ্য উদ্দেশ্য।


শুধুমাত্র ভ্রমণ পিয়াসী মনকে তৃপ্তি দিয়ে কখনো কোনো পর্যটক ক্ষান্ত থাকেনি। তাকে বিস্তারিত ভাবে লিপিবদ্ধ করে রাখবার প্রবণতা অস্থির করে তুলেছে। কারণ ভ্রমণের নেশা মানুষের আছে বলেই অজানার সঙ্গে তার পরিচয় লিপিবদ্ধ করে রাখবার নেশাও চিরকালের। অবশ্য বিভিন্ন দেশের ভৌগোলিক বিবরণ ও মানুষের জীবনযাত্রা যদি এই লেখার মুখ্য উপকরণ হত তাহলে সাধারণ মানুষ ভ্রমণ সাহিত্য পাঠ না করে ভূগোল, ইতিহাস পাঠে তার রসনা তৃপ্তি ঘটাত। কিন্তু ভ্রমণ সাহিত্য মুখ্যত চোখে দেখা দেশকাল পাত্রে অনুপুঙ্খ বর্ণনা দান করে ক্ষান্ত থাকে না।

তাতে সন্নিবিষ্ট হয় সাধারণ মানুষের ভালোলাগা ও মন্দলাগার বিশেষ অনুভূতি। তার জন্যেই ভ্রমণ মূলক গ্রন্থ এখন সাহিত্যে উত্তীর্ণ হতে পেরেছে। সেই কারণেই বস্তুগত বিবরণকে অতিক্রম করে মানুষের অনুভূতির জগৎ বিচিত্রভাবে মেলে ধরে এবং উপভোগ্য করে তোলে। তবে সেই সঙ্গে আবশ্যক ঐশ্বর্য যুক্ত ভাষার সাবলীল ভঙ্গিমা, তাই বোধহয় বিশিষ্ট সাহিত্যিকদের হাতেই ভ্রমণ কাহিনি ভ্রমণ সাহিত্য পদবাচ্যে উত্তীর্ণ হয়।


ভ্রমণমূলক রচনার উদাহরণ দিতে গিয়েই প্রথমেই স্মরণে আসবে—দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের “হিমালয় দর্শন" জাতীয় গ্রন্থটির কথা। সেখানে যেমন আছে বিভিন্ন তথ্য, তেমন আছে বিশিষ্ট আধ্যাত্ম অনুভূতির তথ্য। নাম করতে হয় সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের ‘পালামৌ' গ্রন্থটি, যা লেখকের রচনার গুণে হয়ে উঠেছে প্রাণবন্ত ও চিত্তাকর্ষক। এ সম্পর্কে বিমুগ্ধ চিত্তে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন-“সঞ্জীব বালকের ন্যায় সকল জিনিস কৌতূহলের সহিত দেখিতেন এবং প্রবীণ চিত্রকরের ন্যায় তাহার প্রধান অংশগুলি নির্বাচন করিয়া লইয়া তাঁহার চিত্রকে পরিস্ফুট করিয়া তুলিতেন এবং ভাবুকের ন্যায় সকলের মধ্যেই তাঁহার নিজের একটি হৃদয়াংশ যোগ করিয়া দিতেন।” এছাড়া, স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন-যাত্রী, রাশিয়ার চিঠি, জাভা যাত্রীর পত্র, ইউরোপ প্রবাসীর পত্র ইত্যাদি তবে ভ্রমণ কাহিনির সঙ্গে কিছুটা গল্পকাহিনি যোগ করলে কেমন উপভোগ্য ও চমকপ্রদ হয়ে ওঠে তার প্রমাণ মেলে প্রবোধ কুমার সান্যালের ইতিহাস সৃষ্টিকারী গ্রন্থ—'মহাপ্রস্থানের পথে' এবং ‘দেবাত্মা হিমালয়'-এর মধ্যে।


বলতে দ্বিধা নেই ভ্রমণ সাহিত্যে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য ভাণ্ডারকে বেশ পূর্ণতা দান করেছে। এই মহৎ কর্মের দায়ভাগ প্রায় অধিকাংশ বঙ্গীয় লেখক শ্রেণি মাথা পেতে নিয়েছিলেন যেমন উল্লেখ করা যায়-জলধর সেনের ‘হিমালয়' অন্নদাশংকর রায়ের 'পথে প্রবাসে’, দেবেশ দাসের ‘ইয়োরোপা', রমানাথ বিশ্বাসের-‘লালচীন’, মনোজ বসুর-‘চীন দেখে এলাম' ইত্যাদি। কেবল ভ্রমণ পিপাসু মন নিয়ে অধিকাংশ লেখক পরিভ্রমণে মত্ত হলেও কোনো কোনো পরিব্রাজক কেবলমাত্র হিন্দু তীর্থস্থানকে উপজীব্য করে ভ্রমণের মধ্য দিয়ে তার অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করেছেন। এক্ষেত্রে সর্বাগ্রে নাম করতে হয় লেখক ও সাধক শঙ্কুমহারাজের কথা।

তাঁর ‘বিগলিত করুণা', 'জাহ্নবী যমুনা’, ‘মধু বৃন্দাবন’, ‘যদি গৌর না হত’ প্রভৃতি গ্ৰন্থ এই শ্রেণিভুক্ত। এছাড়া অবধৃতের-‘মরুতীর্থ হিংলাজ’, বীরেন্দ্রনাথ সরকারের ‘রহস্যময় রূপকুণ্ড’ প্রভৃতি গ্রন্থগুলি আশ্চর্য সুন্দর ভ্রমণ ও সরস গল্প দ্বারা অবয়ব সৌন্দর্য ভরিয়ে তুলেছে। এ প্রসঙ্গে জেনে রাখা দরকার ভ্রমণ কাহিনিকে আস্বাদ্য ও উপভোগ্য করে তুলবার জন্য একটা কাহিনিসূত্র থাকতেই পারে। কিন্তু ভ্রমণ কাহিনির চরিত্র যেন নষ্ট না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকা আবশ্যক। লেখকের সংযম ও মাত্রাবোধই ভ্রমণ কাহিনিকে • সাহিত্যে উত্তীর্ণ করার সোপানমাত্র, উক্ত রচনাগুলিই তার প্রধান দৃষ্টান্ত। ভুললে চলবে না। ভ্রমণের মধ্যে রয়েছে নতুনের প্রতি বিস্মিত আকর্ষণ রোমাঞ্চ।

নানা দেশ ও নানা জাতি, নানা ব্যবহার ও সেই নানা দেশজাতির ধর্ম, সংস্কার, আচার, ঐতিহ্য ও ইতিহাস জানার কৌতুহল। সেই কৌতুহল নিয়েই মানুষ ঘর ছেড়ে বের হয়। তারপর যখন সাহিত্যে রূপ দিতে চায় তখন সেই কৌতুহল রোমাঞ্চকে পাঠক মনে জাগিয়ে না রাখলে চলে না।

একটি বাংলা ভ্রমণ সাহিত্য :

অন্নদাশংকর রায়ের ‘পথে প্রবাসে' (১৯৩১) বাংলা ভ্রমণ-সাহিত্যের একটি অসাধারণ দৃষ্টান্ত। এই গ্রন্থের রচনা স্থল ইউরোপ। গ্রন্থের ভূমিকায় প্রমথ চৌধুরী জানিয়েছেন-“এ ভ্রমণ বৃত্তান্ত যে একখানি যথার্থ সাহিত্য গ্রন্থ এ বিষয়ে আমার মনে কোনও সন্দেহ নেই, এবং আমার বিশ্বাস সাহিত্যরসের রসিক মাত্রেই আমার সঙ্গে এ বিষয়ে একমত।” আর এর রচনা কৌশল সম্পর্কে লেখক জানালেন : “সকলে সব জিনিস দেখে না।

সকলের চোখে সব জিনিস পড়ে না। বিশেষ এক জনের চোখে বিশেষ বিশেষ একটা দৃশ্য ঘোমটা খুলে মুখ দেখায়। সেইজন্য একই জিনিস একশোজন দেখে থাকলেও একের দেখা অপরের দেখা নয়। এই যে দর্শন এছাড়া আর কোনো কৌশল আমি তো জানিনে।”


‘পূর্বকথা' সহ মোট ২২টি পর্বে বিভক্ত অন্নদাশংকরের ‘পথে প্রবাসে'। প্রথম মহা যুদ্ধোত্তর ইউরোপই তাঁর বর্ণনার বিষয় পর্যবেক্ষণের বিষয়। ভারতবর্ষীয় প্রসঙ্গও তুলনামূলক প্রক্রিয়ায় ফুটে উঠেছে। যেমন ‘পূর্বকথা' পর্বে লেখকের দক্ষিণভারত ভ্রমণ কিছু তীক্ষ্ণ মন্তব্যে শেষ হয়েছে।

আবার জাহাজে উঠবার মুহূর্তটিকে তিনি সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন—“ভারতবর্ষের মাটির ওপর থেকে শেষবারের মতো পা তুলে নিলুম আর সদ্যোজাত শিশুর মতো মায়ের সঙ্গে আমার যোগসূত্র এক মুহূর্তে ছিন্ন হয়ে গেল।”


ইউরোপ পৌঁছুতে, অন্নদাশংকরকে জাহাজে যেতে হয়েছে আরব সাগর, লোহিত সাগর এবং সুয়েজ কেনাল হয়ে পোর্ট সৈয়দ, তারপর ফ্রান্সের দ্বিতীয় শহর মার্সেলস এ। মার্সেলস থেকে রেলপথে প্যারিস হয়ে ক্যালে হয়ে রেলপথে ডোভার। ডোভার থেকে লন্ডন, বিশের দশকে অন্নদাশংকরের ইউরোপ অভিযাত্রার পথ রোমাণ্যকর, সহজ মনে হলেও দীর্ঘমেয়াদী। তিনি যাকে দেখার কৌশল বলেন তাও এই পথে যেতে যেতে কার্যকর হয়েছে তা বলা যায়।


লন্ডনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় প্রসঙ্গে লিখেছেন-"লন্ডনের সঙ্গে আমার শুভদৃষ্টি হল গোধূলিলগ্নে হতে না হতেই সে চক্ষু নত করে আঁধারের ঘোমটা টেনে দিল।" লন্ডনের নিসর্গ দর্শনে অভিভূত হয়ে তিনি বলেন: “গাছেরা নতুন দিনের নতুন ফ্যাসন অনুযায়ী সাজ বদলে ফেলেছে, তাদের এই কাঁচা সবুজ রঙের ফ্রকটিকে তার নানা হলে দেখাচ্ছে।” সমাজ দর্শন সম্পর্কে বলেছেন : “বিউটির চেয়ে ডিউটিকে ইংরাজ বড়ো বলে মানে।” লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মোনালিসা সম্পর্কে তিনি লেখেন : তার সেই রহস্যময় হাসি মানুষের পিছু নেয়, তাকে ভোলাবার সাধ্য নেই, ইচ্ছা করলেও চেষ্টা করলেও ভুলতে পারিনে।”


জার্মানি, অস্ট্রিয়া, ইটালি পরিক্রমায় ‘পথে প্রবাসের অভিজ্ঞতার মনোরম। লেখক কত মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছেন। সুইটজারল্যান্ডের ফরাসি সাহিত্যিক মনীষী রোমা রোল্যার সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেছেন।

ভাবতে ভালো লাগে, যখন জানা যায় জা ত্রিস্তোফের লেখক ওই মানুষটি অন্নদাশংকরকে জানাচ্ছেন মনীন্দ্রলাল বসুর ‘পদ্মরাগ’, শরৎচন্দ্রের ‘শ্রীকান্ত’ উপন্যাস ও দিলীপ কুমার রায়ের গানের কথা। তাই বলতে হয়, সামগ্রিক বিচারে ‘পথে প্রবাসে’ সার্থক ভ্রমণ সাহিত্য।

আশা করি আমার ভাই বোনের এই পোস্টটি অনেক ভালো লেগেছে। এর সাথে ভ্রমণ সাহিত্যের স্বরূপ উদ্ঘাটন করে বাংলা ভ্রমণ সাহিত্যের উদাহরণ দাও বিষয়টিও তোমরা বুঝতে পেরেছ। যদি এই পোস্টটি থেকে কিছু উপকার পাও, তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে কখনো ভুলবেন না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন