ফিরোজ শাহের সামরিক কর্মসূচি - আসল ব্যাখা

ফিরোজ শাহের সামরিক কর্মসূচি: আসসালামু আলাইকুম ভাই ও বোনেরা আপনারা কেমন আছেন? আশা করি ভালো আছেন, আমিও আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি, আপনাদের স্বাগতম জানাচ্ছি লাখ পড়া মাইমুনা তে। আমার নাম মাইমুনা, আজকে আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা আপনাদের বিভিন্ন জায়গায় লাগতে পারে। 

আমি জানি আপনারা “ফিরোজ শাহের সামরিক কর্মসূচি” বিষয়ে ধারণা নিতে অনলাইনে খোজাখুঝি করছেন।আর আপনি এখন একদম সঠিক পোস্ট এ আছেন। এখানে আপনি এই বিষয়টি সম্পর্কে সব ভালো ভাবে জানতে পারবেন।

ফিরোজ শাহের সামরিক কর্মসূচি

ফিরোজ শাহের সামরিক কর্মসূচি

প্রকৃতিগতভাবে ফিরোজ শাহ ছিলেন শান্তিপ্রিয় মানুষ। একজন সমরনায়কের যে সকল গুণাবলি আবশ্যিক, সেগুলি তাঁর ছিল না। সম্ভবত সে বিষয়ে ফিরোজ সচেতন ছিলেন। তাই দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিকে পুনর্বার দিল্লির অন্তর্ভুক্ত করার কোনো চেষ্টা তিনি করেননি। 

তা ছাড়া, সুলতানের মর্যাদা ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধির জন্য রাজ্যবিজয়ের নামে সমধর্মী মুসলমানদের রক্তপাত ও হত্যাকাণ্ডকে তিনি প্রকৃত ইসলামীয় আচরণের পরিপন্থী বলে বিবেচনা করতেন। এই কারণে সামরিক অভিযান কর্মসূচি তাঁর আমলে বিশেষ গুরুত্ব পায়নি। তবে রাজধানীতে থেকে কয়েকটি অঞ্চলকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য তিনি কয়েকটি সামরিক অভিযান চালান।

ফিরোজ শাহ ১৩৫৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রথম সামরিক অভিযান চালান। বাংলার শাসক হাজি ইলিয়াস শাহ ইতিমধ্যে 'সুলতান সামসউদ্দিন ইলিয়াস শাহ'উপাধি নিয়ে স্বাধীন শাসনের সূচনা করেছিলেন। ফিরোজ শাহ সসৈন্যে বাংলায় উপস্থিত হলে সামউদ্দিন দুর্ভেদ্য একডালা দুর্গের ভিতর থেকে প্রতিরোধ চালিয়ে যান। শেষ পর্যন্ত ফিরোজ শাহ অভিযান অসমাপ্ত রেখেই রাজধানীতে ফিরে আসতে বাধ্য হন (১৩৫৫ খ্রিঃ)। 

ড. স্মিথের মতে, ফিরোজ শাহ বাংলার প্রতিরোধ ভেঙে ফেলতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু দুর্গের অবস্থানকারী শিশু, নারী ইত্যাদির ক্রন্দনধ্বনিতে বিচলিত হয়ে তিনি অভিযান বন্ধ করে দেন। তা ছাড়া, মুসলমান হয়ে মুসলমানের রক্তপাতেও তিনি আগ্রহী ছিলেন না। 

কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে, আসন্ন বর্ষাঋতুর বিপজ্জনক দিকটি ফিরোজকে অভিযান অসমাপ্ত রাখতে বাধ্য করে। যাই হোক্, ফিরোজ বাংলার অভিযান অসমাপ্ত রেখে প্রত্যাবর্তন করে পরোক্ষভাবে বাংলার স্বাধীনতা স্বীকার করে নেন। ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার লিখেছেন যে, ১৩৫৭ খ্রিস্টাব্দে ফিরোজ শাহ এবং ইলিয়াস শাহের মধ্যে দূত ও উপঢৌকন বিনিময় হয় এবং উভয়েই নিজ নিজ অবস্থান মেনে নেন।

ইলিয়াস শাহের পুত্র সিকন্দর শাহের আমলে ফিরোজ শাহ তুঘলক আবার বাংলাদেশ আক্রমণ করেন (১৩৫৯ খ্রিঃ)। সিকন্দরও তাঁর পিতার মতোই ‘একডালা' দুর্গে আশ্রয় নেন। ফিরোজ বহুদিন দুর্গ অবরুদ্ধ রেখেও দুর্গ দখল করতে ব্যর্থ হন। শেষ পর্যন্ত উভয় পক্ষই ক্লান্ত হয়ে সন্ধি স্থাপন করে। আফিফের মতে, সিকন্দর শাহ প্রথমে সন্ধির প্রস্তাব দেন। 

কিন্তু ড. মজুমদারের মতে, একথা সর্বাংশে সত্য নয়। কারণ এই সন্ধি থেকে ফিরোজ কোনোভাবেই লাভবান হননি। পরন্তু তিনি সিকন্দর সাহের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নেন এবং সমকক্ষ রাজার মতোই দূত ও উপঢৌকন বিনিময় করেন। দ্বিতীয়বার বাংলা অভিযানের সময় ফিরোজ শাহ কনৌজ ও অযোধ্যার মাঝে গোমতীর তীরে ‘জৌনপুর' নামে একটি নতুন শহরের পত্তন করেন।

বাংলা থেকে প্রত্যাবর্তনের পথে জৌনপুরে উপস্থিত হয়ে ফিরোজ শাহ ‘জাজনগর' (উড়িষ্যা) আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। সম্ভবত, 'জগন্নাথধাম পুরী’ দখল করাই তাঁর এই আকস্মিক সিদ্ধান্তের প্রধান কারণ ছিল। আফিফ-এর গ্রন্থ থেকে এই অভিযানের করুণ চিত্র পাওয়া যায়। 

একপ্রকার বিনা প্রতিরোধে বহু সাধারণ রক্ষীকে হত্যা করে সুলতানি ফৌজ উড়িষ্যায় প্রবেশ করে। রাজা তৃতীয় ভানুদেব ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে দুর্গম জঙ্গলে আত্মগোপন করেন। ফিরোজ শাহ পুরীর জগন্নাথ মন্দির আক্রমণ করে মুর্তিগুলি ভেঙে চুরমার করে দেন। 

পুরী থেকে সুলতানি বাহিনী চিল্কা হ্রদের নিকট উপস্থিত হয়। এখানে তখন আশ্রয় নিয়েছিল প্রায় এক লক্ষ ভীতিবিহ্বল হিন্দু নরনারী। ফিরোজ নির্বিচারে সেই সকল নিরস্ত্র, নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেন ("The Sultan converted the island into a basin of blood by massacre of the unbelievers."-quoted from Afif)। বহু নারীকে ক্রীতদাসী হিসেবে সৈন্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। 

শেষ পর্যন্ত উড়িষ্যার রাজা সুলতানের বশ্যতা স্বীকার করে সন্ধির প্রস্তাব দেন। বাৎসরিক কিছু হাতি ও অর্থ দিতেও ভানুদেব রাজি হন। ফিরোজ শাহ এই প্রস্তাব মেনে নেন এবং অবরোধ তুলে নিয়ে রাজধানীতে প্রত্যাবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেন।

জনৈক আধুনিক গবেষক ফিরোজ শাহের এই অভিযানের মূল্যায়ন প্রসঙ্গে লিখেছেন : “It was an audacious campaign, briliantly conceived and mightily executed....the successful execution of this campaign testifies to Firuz's undoubted skill as a general.” বস্তুত, একটা সামরিক অভিযানের গুরুত্ব বহুলাংশে নির্ভর করে সেই অভিযানের উদ্দেশ্য ও পরিণতির ওপর। ফিরোজ শাহ তুঘলকের এই আকস্মিক জাজনগর অভিযান উপরোক্ত দুটি দিক থেকেই ছিল দুর্বল ও নিষ্ফলা। এই অভিযানের উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে আফিফ এবং আইন-উল-মুলক লিখেছেন যে, “উড়িষ্যার বিখ্যাত জগন্নাথদেবের মন্দির ধ্বংস করা, অবিশ্বাসীদের শায়েস্তা করা এবং হাতিসংগ্রহের জন্য সুলতান জাজনগর আক্রমণ করেছিলেন" ("The object of the expedition was to break the idols, to shed the blood of the enemies of islam, (and) to hunt elephants.") / সাম্প্রতিক কোনো কোনো গবেষক প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে, ফিরোজের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল হাতি শিকার করা, অন্যান্যগুলি এসেছে প্রসঙ্গক্রমে এবং ঘটনাচক্রে। 

কিন্তু ড. মজুমদার মনে করেন, এটি ফিরোজের চরিত্রকে উজ্জ্বল করার একটা ব্যর্থ চেষ্টা মাত্র। কারণ একজন উদাসী শাসকের পক্ষে এত দুর্গম অঞ্চলে শুধুমাত্র হাতি শিকারের জন্য অগ্রসর হওয়া সম্ভব ছিল না। পরন্তু এটি প্রমাণিত সত্য যে, তিনি পুরীর জগন্নাথ মন্দির ধ্বংস করেছেন এবং বহু হিন্দুকে হত্যা করেছেন। এমনকি উড়িষ্যা দখল করাও তাঁর উদ্দেশ্য ছিল না। তার প্রমাণ গজপতিদের বশ্যতা স্বীকার করার পরেও ফিরোজ সেখানে সুলতানি শাসন কায়েম করার চেষ্টা করেননি। 

তাই ধরে নেওয়া যায় যে, জগন্নাথের মন্দির ধ্বংস করা এবং হিন্দুদের শাস্তি দেওয়াই ছিল ফিরোজের উড়িষ্যা অভিযানের মূল লক্ষ্য ("The destruction of the temple of Jagannatha and the chastisement of the Hindus were the main objects. The subjugation of Orissa and the elephant-hunting were at best subsidiary issues. "Dr. Majumdar)। তাই উদ্দেশ্যের দিক থেকে এই পরিকল্পনার মধ্যে মহৎ কিছু ছিল না। পরিণতির দিক থেকেও এই অভিযান ছিল ব্যর্থ। উড়িষ্যা থেকে ভৌমিক কোনো লাভ সুলতানের হয়নি। বহু অর্থ, সময় ও সৈন্যর প্রাণের বিনিময়ে তিনি পেয়েছিলেন। কিছু হাতি ও সামান্য অর্থের প্রতিশ্রুতি। তা ছাড়া, আফিফ লিখেছেন যে, জাজনগর থেকে প্রত্যাবর্তনের সময় সুলতান পথ হারিয়ে উড়িষ্যার গভীর জঙ্গলে অসহায়ভাবে ছয় মাস অতিবাহিত করেছিলেন। এই সময় রসদের অভাব ঘটে এবং বহু সেনা মারা যায়। ড. মজুমদারের ভাষায় বলা চলে, “It was neither planned nor executed in a manner worthy of a skillful general."

১৩৬১ খ্রিস্টাব্দে নগরকোট (কাংড়া)-এর বিরুদ্ধে ফিরোজ শাহ একটি অভিযান প্রেরণ করেন। কয়েকমাস অবরোধের পর তিনি কাংড়া দুর্গটি দখল করতে সক্ষম হন। এখানে হিন্দুদের 'জাওলামুখী মন্দির’ লুঠ করে তিনি বহু অর্থ ও তিন শতাধিক সংস্কৃত পুঁথি সংগ্রহ করেন। নগরকোটের রাজা সুলতানের বশ্যতা স্বীকার করে স্বাধীনভাবে রাজত্ব করার অনুমতি পান।

পরের বছরেই ফিরোজ শাহ নিম্ন-সিন্ধু ও থাট্টার বিরুদ্ধে অভিযানে অগ্রসর হন। নিজামীর মতে, এই অভিযানটি এত বিশৃঙ্খলার সাথে পরিচালিত হয়েছিল যে, সুলতানির ইতিহাসে তার তুলনা পাওয়া যাবে না। ফিরোজ ভুলে গিয়েছিলেন যে, থাট্টাতে তার্থীর বিদ্রোহ দমন করতে গিয়েই মহম্মদ তুঘলক মারা গিয়েছিলেন। অবশ্য মহম্মদের মৃত্যুর প্রতিশোধ গ্রহণ এবং সিন্ধুর বিদ্রোহী শাসকদের শায়েস্তা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে ফিরোজ শাহ প্রকৃত সুলতানের কাজই করেছেন। ৯০ হাজার অশ্বারোহী সৈন্য ও ৪৮০টি রণহস্তীসহ ফিরোজ সিন্ধুর বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। পথে একটি নৌবহরও গঠন করেন। কিন্তু সেনাপতি ও যোদ্ধা হিসেবে অক্ষমতার জন্য এই অভিযানটিও চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা ও ব্যর্থতার সম্মুখীন হয়। সিন্ধুর জাম বনহবিনা অতি দক্ষতার সাথে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। সুলতানি অসংখ্য সৈন্য ও ঘোড়া মৃত্যুমুখে পতিত হয়। 

বিভ্রান্ত সুলতান গুজরাটে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু যুদ্ধের বিপর্যয়ের থেকেও পশ্চাদপসরণ বেশি বিপর্যয়কর হয়ে দাঁড়ায়। খাদ্যাভাব এবং অজানা রোগে বহু সৈন্য ও ঘোড়া মারা যায়। কচ্ছের রাণ-এলাকায় পানীয় জলের অভাবেও অনেকের প্রাণনাশ ঘটে। প্রায় সর্বস্বান্ত হয়ে কোনোক্রমে সুলতান গুজরাটে পৌঁছাতে পারেন। গুজরাটে ফিরোজ আবার সৈন্য সংগ্রহ করেন। 

এই সময় বাহমনী রাজ্যের বিক্ষুব্ধ যুবরাজ বাহরাম শাহ, ওই রাজ্য আক্রমণ করার জন্য ফিরোজকে আমন্ত্রণ জানান। বাহমনী রাজ্যে দিল্লির আধিপত্য স্থাপনের সুবর্ণ সুযোগ ফিরোজের সামনে উপস্থিত হয়। কিন্তু অদূরদর্শী ফিরোজ শাহ সিন্ধুর ব্যর্থতার প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য বাহমানী রাজ্য আক্রমণ থেকে বিরত থাকেন। অবশ্য দ্বিতীয় অভিযানে তিনি সফল হন। নিম্ন-সিন্ধু ও খাট্টার শাসকদ্বয় আনুগত্য প্রদর্শনসহ সুলতানকে বাৎসরিক কর দিতে সম্মত হন। আড়াই বছর পর ফিরোজ দিল্লি প্রত্যাবর্তন করেন।

ঠিক রাজনৈতিক কারণে নয়, কিছুটা ব্যক্তিগত আক্রোশ দ্বারা চালিত হয়ে ফিরোজ ১৩৮০ খ্রিস্টাব্দে কাটিহার (রোহিলাখণ্ড) রাজ্য আক্রমণ করেন। কাটিহারের রাজা খরকু বদাউনের গভর্নর সৈয়দ মহম্মদ ও তাঁর দুই ভ্রাতাকে হত্যা করেছিলেন। খরকুকে উপযুক্ত শাস্তিদানের উদ্দেশ্যে ফিরোজ শাহ সসৈন্যে কাটিহারে উপস্থিত হন এবং নির্বিচারে হিন্দুদের হত্যা করেন। 

ফিরোজ নির্দেশ দেন যে, পরবর্তী পাঁচ বছর একইভাবে কাটিহারকে বিধ্বস্ত করা হবে। এই নির্দেশ যথাযথ পালিত হয়। পাঁচ বছর ধরে কাটিহারের হিন্দুদের ওপর ধর্মান্ধ সুলতান চরম অত্যাচার চালান। এই অত্যাচারের ফলে নিহত হয় কয়েক হাজার হিন্দু। শ্মশানে পরিণত হয় কাটিহার অঞ্চল। 

সমকালীন জনৈক লেখকের ভাষায় : “ওই বছরগুলিতে এক একর জমিতেও চাষ-আবাদ হয়নি, সমস্ত মানুষ কাটিয়েছে বিনিদ্র রজনী, তিনজন সৈয়দের প্রাণের বিনিময়ে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে কয়েক হাজার নিরপরাধ হিন্দুর জীবন।”

আশা করি আমার ভাই বোনের এই পোস্টটি অনেক ভালো লেগেছে। এর সাথে ফিরোজ শাহের সামরিক কর্মসূচি বিষয়টিও তোমরা বুঝতে পেরেছ। যদি এই পোস্টটি থেকে কিছু উপকার পাও, তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে কখনো ভুলবেন না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন