হরপ্পীয়দের রাষ্ট্রীয় জীবন, হরপ্পীয়দের ধর্মীয় জীবন ও হরপ্পীয়দের অর্থনৈতিক জীবন - আসল ব্যাখা

হরপ্পীয়দের রাষ্ট্রীয় জীবন, হরপ্পীয়দের ধর্মীয় জীবন ও হরপ্পীয়দের অর্থনৈতিক জীবন: আসসালামু আলাইকুম ভাই ও বোনেরা আপনারা কেমন আছেন? আশা করি ভালো আছেন, আমিও আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি, আপনাদের স্বাগতম জানাচ্ছি লাখ পড়া মাইমুনা তে। আমার নাম মাইমুনা, আজকে আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা আপনাদের বিভিন্ন জায়গায় লাগতে পারে।

আমি জানি আপনারা “হরপ্পীয়দের রাষ্ট্রীয় জীবন, হরপ্পীয়দের ধর্মীয় জীবন ও হরপ্পীয়দের অর্থনৈতিক জীবন” বিষয়ে ধারণা নিতে অনলাইনে খোজাখুঝি করছেন।আর আপনি এখন একদম সঠিক পোস্ট এ আছেন। এখানে আপনি এই বিষয়টি সম্পর্কে সব ভালো ভাবে জানতে পারবেন। 

হরপ্পীয়দের রাষ্ট্রীয় জীবন, হরপ্পীয়দের ধর্মীয় জীবন ও হরপ্পীয়দের অর্থনৈতিক জীবন - আসল ব্যাখা

হরপ্পীয়দের রাষ্ট্রীয় জীবন, হরপ্পীয়দের ধর্মীয় জীবন ও হরপ্পীয়দের অর্থনৈতিক জীবন

পরিবেশগত বৈচিত্র্যের কারণে হরপ্পীয়দের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারণ পদ্ধতিও সম্ভবত বিভিন্নরকম ছিল। শিকার ও পশুপালনের পাশাপাশি হরপ্পার বস্তুগত সংস্কৃতির ভিত্তি ছিল কৃষিকাজ। 

দু'রকমের গম ছাড়াও বার্লি, তিল ও সর্ষে চাষ হত। দেশীয় কার্পাস তুলা চাষের প্রমাণ মহেগ্বোদড়োতে পাওয়া গেছে। মহেঞ্জোদড়ো ও হরপ্পাতে ধান চাষের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই, তবে লোথাল ও রংপুরে (গুজরাট) খ্রিষ্টপূর্ব ১৮০০ অব্দে মানুষ ধান ব্যবহার করত বলে অনুমান। তিল এবং কার্পাস চাষ থেকে স্পষ্ট যে, হরপ্পীয়রা তৈল নিষ্কাসন এবং বস্তুবয়ন ব্যবস্থার সাথে পরিচিত ছিল। 

অলচিন দম্পতি মনে করেন যে, বাণিজ্যিক ফসল হিসেবেই সেকালে কলাই চাষে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। হরপ্পাবাসী লাঙল দ্বারা চাষাবাদ জানত কিনা, এ বিষয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে বিতর্ক ছিল। তবে কালিবনগানের উৎখনন থেকে প্রাক্-হরপ্পাপর্বের একটি কৃষিক্ষেত্রে হলকর্ষণের চিহ্ন পাওয়া গেছে। 

সুতরাং কৃষিকাজে লাঙলের ব্যবহার হরপ্পীয়দের অজানা থাকার কথা নয়। বানওয়ালি ও গরেনিওয়ান প্রত্নক্ষেত্র থেকে পোড়ামাটির লাঙলের নিদর্শন পাওয়া গেছে। 

কালিবনগানের কৃষিক্ষেত্রটি থেকে অনুমিত হয় যে, হরপ্পীয়রা কাঠের তৈরী লাঙলের ফলা ব্যবহার করত। লাঙল টানার কাজে গো-শক্তি ব্যবহার হত নাকি অন্য কোন পশুর সাহায্য নেওয়া হত, তা স্পষ্ট নয়। একাধিক নগরে শস্যাগারের অস্তিত্ব হরপ্পীয়দের উদ্বৃত্ত কৃষি-উৎপাদনের ইঙ্গিত দেয়। 

কৃষিকাজের জন্য জলের প্রয়োজন। হরপ্পা সংস্কৃতির এলাকাগুলিতে বৃষ্টিপাত হত অপেক্ষাকৃত কম। তাই জলসেচব্যবস্থার প্রয়োজন ছিল। তবে খাল কেটে জলসেচের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই। সম্ভবত নিচু এলাকায় জল বাঁধ দিয়ে রাখা হত। ডি. এন. ঝা-এর মতে, উৎখননকারীরা লোথালের যে বিশাল জলাশয়কে জাহাজঘাটা বলে সনাক্ত করেছেন, আসলে তা নদীর প্লাবনকালীন জল সঞ্চয়ের আধার ছাড়া কিছুই নয়।

কৃষির মতই হরপ্পীয় অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ছিল পশুপালন। গৃহপালিত ও বুনো জন্তুদের সাথে হরপ্পীয়দের সহাবস্থান তাদের পরিবেশ সচেতনা এবং বিচিত্র পরিবেশের সাথে মানিয়ে চলার মানসিকতার পরিচয় দেয়। 

হরপ্পার টেরাকোটায় গোরুর চিত্র দেখা যায় না, তবে গোরু তাদের প্রধান গৃহপালিত পশু ছিল, এমন প্রমাণ আছে। এছাড়া জেবু, কুকুর, বেড়াল, মহিষ, হাতি ইত্যাদি পশুর সাথে তাদের ঘনিষ্ট পরিচয় ছিল। হরপ্পা সভ্যতার বিভিন্ন প্রত্নস্থল থেকে প্রচুর বুনো জন্তুর হাড়গোড় পাওয়া গেছে। এগুলি বিশ্লেষণ করে পণ্ডিতরা মনে করেন যে হরিণ, গণ্ডার ইত্যাদি বন্যপ্রাণীর সাথেও তাদের পরিচয় ছিল। হরপ্পা সভ্যতার আমলে ঘোড়ার ব্যবহার জানা ছিল কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। 

পশ্চিম ভারতের সুর্কোতাডা প্রত্নক্ষেত্রে প্রাপ্ত অস্থিখণ্ড বিশ্লেষণ করে কেউ কেউ এটিকে ঘোড়ার অস্থি বলে প্রমাণ করতে চেয়েছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, ঐ অস্থির অবশেষ বন্য গর্দভের, ঘোড়ার নয়।

একটি নগর-সভ্যতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল কারিগরি বিদ্যার সাথে পরিচয় ও তার প্রয়োজন। হরপ্পীয়রা এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রমী ছিলেন না। হরপ্পার নানা প্রত্নক্ষেত্র থেকে কারিগরি দ্রব্য নির্মাণের বহু নিদর্শন পাওয়া গেছে। 

পাথরের যন্ত্রপাতি নির্মাণের কাজ আগের মতই অব্যাহত ছিল। তার সাথে যুক্ত হয়েছিল ধাতু নির্মিত যন্ত্রাদি। পাথরের তৈরী তৈজসের মধ্যে অন্যতম ছিল ছুরিকা। সুক্কুর অঞ্চলে একটি স্থানকে অলচিন দম্পতি ছুরি নির্মাণ কারখানা বলে সনাক্ত করেছেন। ক্লিন্ট পাথর থেকে তৈরী ছুরির নিদর্শন এখানে পাওয়া গেছে। ক্লিন্ট পাথরের ছুরি মহেঞ্জোদড়ো এবং হরপ্পাতেও পাওয়া গেছে। সম্ভবত সুক্কুরের কারখানা থেকে এই ছুরি অন্যান্য নগরকেন্দ্রে সরবরাহ করা হত। ধাতু হিসেবে তামা ও ব্রোঞ্জের প্রচুর তৈজস নির্মিত হত। 

তামার সাথে টিন মিশিয়ে হরপ্পীয়রা ব্রোঞ্জ নামক মিশ্রধাতু তৈরী করতে সক্ষম হয়েছিল। 

আফগানিস্তান ও হাজারিবাগ থেকে টিন সংগ্রহ করা হত। তামা আসত মূলত রাজস্থানের ক্ষেত্রী থেকে। বাণিজ্যসূত্রে বালুচিস্তান থেকেও হয়ত কিছু তামার আমদানি করা হত। তামা ও ব্রোঞ্জের খুর, ছুরি বাটালি, বর্ষাফলক, তীর, কাস্তে, কুঠার ইত্যাদি তৈরী করা হত। তবে ব্রোঞ্জের যোগান খুবই কম হওয়ার কারণে হরপ্পাসভ্যতার আমলে ব্রোঞ্জ নির্মিত যন্ত্রাদির নিদর্শন বিশেষ পাওয়া যায়নি। তুলনামূলকভাবে তামাই ছিল প্রধান ব্যবহৃত ধাতু।

হরপ্পীয় প্রত্নক্ষেত্রগুলি থেকে সোনা, রূপা, তামা, শাঁখা, হাতির দাঁত নানা জাতীয় পাথর থেকে নির্মিত অলংকার ও উপাদান পাওয়া গেছে। এগুলি থেকে পুঁতি, পদক, সেফটিপিন জাতীয় গহনা ইত্যাদি তৈরী করা হত। কর্ণেলিয়াম পাথর থেকে লম্বা ঢোলকাকৃতি, আঁচড়কাটা নক্সা সমন্বিত পুঁতি তৈরীর প্রযুক্তিগত কৃতিত্ব হরপ্পীয়দের ছিল। অধ্যাপক বি শত্ বানাওয়ালিতে খনন কাজের সময় কর্ণেলিয়াম পাথর থেকে পুতি তৈরীর একটি কারখানা আবিষ্কারের কথা বলেছেন। সোনা ও লাপিম লাজুলি পাথরের পুঁতিও তৈরী করা হত। তবে এই দ্রব্যগুলির দুষ্প্রাপ্যতার কারণে, এদের নির্মাণ ছিল খুবই সীমিত।

হরপ্পা সভ্যতার খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারিগরি শিল্প ছিল ইটের উৎপাদন ও মৃৎপাত্র নির্মাণ। নগরাশ্রয়ী হরপ্পা সভ্যতার নানাস্তরে বিপুল সংখ্যক ইট নির্মিত গৃহের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। স্বভাবতই ইট নির্মাণের জন্য দক্ষ কারিগর এবং গৃহ নির্মাণের জন্য রাজমিস্ত্রির কাজ সেকালে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কুমোরের কাজেরও যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটেছিল। 

ঢাকার সাহায্যে প্রস্তুত করা বহু হরপ্পীয় মৃৎপাত্র পাওয়া গেছে। ডি. এন. ঝা'র মতে, হরপ্পীয় মৃৎপাত্রে উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের মৃৎশিল্পের ঐতিহ্যের সাথে সিন্ধুর পূর্বতীরে অবস্থিত সংস্কৃতির সমন্বয় দেখা যায়। হরপ্পার অধিকাংশ মৃৎপাত্র নিত্য ব্যবহারের উপযোগী ও সাদাসিধে। এদের অন্যতম ছিল শস্য বা জল রাখার জালা, থালা, বাটি ইত্যাদি। তবে বিলাসসামগ্রী এবং রপ্তানিযোগ্য কিছু রঙ্গীন ও নক্শা সমন্বিত পাত্র পাওয়া গেছে। ব্যাপকভাবে না হলেও বস্ত্রবয়ন শিল্পের সাথে হরপ্পীয়দের পরিচয় ছিল। মেহেরগড়ে কার্পাস চাষের প্রাচীনতম নিদর্শন পাওয়া গেলেও, বোনা কাপড়ের প্রাচীনতম নিদর্শন মহেঞ্জোদড়োতেই পাওয়া যায়। 

সুতা কাটার জন্য তকলির ব্যবহারও জানা ছিল। পশম ও সুতি দু'রকম বস্ত্রই তৈরী করা হত। মহেঞ্জোদড়োর একটি ভাস্কর্যে সূচীশিল্প সমৃদ্ধ উত্তরীয় দেখা যায়, যা সূচী শিল্পের সাথে হরপ্পীয়দের পরিচয়ের প্রমাণ দেয়।

হরপ্পীয়রা বস্তুবাদী জীবনদর্শনে বেশী আস্থাশীল ছিলেন। তা সত্ত্বেও চারুশিল্পচর্চার কাজেও তাদের আগ্রহ দেখা যায়। হরপ্পার প্রত্নক্ষেত্রে ভাস্কর্য ও অলংকরণযুক্ত শিল্পকর্মের নানা নিদর্শন পাওয়া গেছে। লক্ষণীয় যে, এই সকল শিল্পকর্মের কেন্দ্রে আছে বিবিধ পশুপাখি। মনুষ্যমূর্তি থাকলেও তা নিতান্তই সীমিত। শিল্পকর্মের উপাদান মূলত কাদামাটি ও চিনামাটি। পাথর ও ব্রোঞ্জের কিছু ভাস্কর্য থাকলেও, তার সংখ্যা খুবই কম। স্টিয়াটাইট পাথরের সীলমোহরে খোদাই করা চিত্রাবলীর মধ্যে কুঁজবিশিষ্ট ষাঁড়, বাইসন, হাতি, গণ্ডার ইত্যাদি প্রাধান্য পেয়েছে। চীনামাটি এবং কাদামাটিতে ত্রিমাত্রিক মূর্তিগুলি তৈরী করা হয়েছে। পাথর বা ব্রোঞ্জের এমন প্রতিকৃতি প্রায় নেই, আশ্চর্যজনকভাবে গোরু বা গৃহপালিত বেড়ালের কোন মূর্তি পাওয়া যায়নি। পশুর মূর্তিগুলির গড়নে ভাস্করের নিপুণ শিল্পদক্ষতার পরিচয় নেই। চিনামাটিতে গড়া ভেড়া আর কাঠবেড়ালের মূর্তিগুলি খুবই ছোট। সম্ভবত এগুলি করচ হিসেবে ব্যবহার করা হত। ব্রোঞ্জ বা পাথরের তৈরী শিল্পকর্মগুলি পোড়ামাটির শিল্প থেকে অনেক উন্নত ছিল। এই প্রভেদের কারণ হতে পারে যে, ব্রোঞ্জ ও পাথরের মূর্তিগুলি অভিজাত বা উচ্চবিত্ত শ্রেণীর জন্য তৈরী করা হত। অন্যদিকে পোড়ামাটির ভাস্কর্যগুলি সাধারণ মানুষের ব্যবহার্য ছিল। বেশ কিছু অতি সাধারণ পোড়ামাটির পশুমূর্তিকে শিরিন রত্নাগর শিশুদের খেলনা কিংবা ‘লোকশিল্প' বলে অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে ব্রোঞ্জ বা পাথরের ভাস্কর্য সুদক্ষ শিল্পী-কারিগরদের দ্বারা খোদাই করা। মহেঞ্জোদড়োর দূর্গ এলাকায় প্রাপ্ত ব্রোঞ্জের মহিষমূর্তিটি যথেষ্ট লম্বা ও প্রাণবন্ত। এখানেই পাওয়া ব্রোঞ্জের ছাগল মূর্তিটিও সুন্দর। একটি হাতলের ওপর বসানো এই ছাগমূর্তির শিং দুটি উল্টোদিকে বাঁকানো থাকায় শিল্পসুষমা বৃদ্ধি পেয়েছে।

মানুষের মূর্তি তৈরীর জন্য কাদামাটি, পোড়ামাটি, পাথর ও ব্রোঞ্জ ব্যবহার করা হত। কাদামাটির মূর্তিগুলি খুবই সাধারণ। মুখমণ্ডলের গড়ন, শিরোভূষণ, অলংকরণ ইত্যাদিতে সামঞ্জস্যের অভাব স্পষ্ট। শিরিন রত্নাগর এগুলিকে নেহাতই 'লোককর্ম' বলে মনে করেন। তুলনামূলকভাবে পাথরের মনুষ্যমূর্তি কিছুটা উন্নত। এগুলি সবই একইরকম বসার ভঙ্গিতে গড়া হয়েছে। 'পুরোহিত রাজা'র মূর্তিটি প্রথানুসারে তৈরী। উজ্জ্বল পোষাক, মস্তকের উপরিভাগে মণিরত্নখচিত অলংকার, সুদৃশ্য দাড়ির মাধ্যমে রাজকীয় ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। হরপ্পীয়দের ভাস্কর্য প্রতিভার উৎকৃষ্ট প্রকাশ দেখা যায় ব্রোঞ্জ নির্মিত মূর্তিগুলিতে। নৃত্যরত ভঙ্গিমায় প্রাপ্ত নারীমূর্তিটি খুবই মনোহর। মূর্তিটি নগ্ন কিন্তু অতি সারল্যে ভরা। মহেঞ্জোদড়োতে ব্রোঞ্জের আরও একটি নারীমূর্তি পাওয়া গেছে, যেটিকে শিরিন রত্নাগর ‘কুশ্রীভগিণী' নামাঙ্কিত করেছেন। নারীমূর্তির বালকসুলভ ক্ষীণতনু দেখে ব্যাসাম বলেছেন যে, সম্ভবত নারীদেহের সৌন্দর্য সম্পর্কে হরপ্পীয়রা পরবর্তী কালের থেকে স্বতন্ত্র ধারণা পোষণ করতেন। বস্তুত হরপ্পীয় সভ্যতার আমলে চারুকলার উপাদান হিসেবে পোড়ামাটিই ছিল মুখ্য। ব্রোঞ্জ ও পাথর ছিল নিতান্তই ব্যতিক্রমী প্রয়াস। অবশ্য কাদামাটির ছাঁচে মোম এবং তপ্ত ব্রোঞ্জ-এর সাহায্যে প্রতিকৃতি তৈরীর যথেষ্ট জ্ঞান তৎকালীন ভাস্করদের রপ্ত ছিল। উপাদানের দুর্লভতার কারণে এই কাজ বেশী করা সম্ভব হয়নি। যাইহোক, পোড়ামাটির ভাস্কর্যের প্রধান বিষয়বস্তু ছিল পশু, পাখি এবং নারীমূর্তি এবং সেই কাজে শিল্পীদের দক্ষতা ও অন্তদৃষ্টি প্রশংসনীয়।

শিরীন রত্নাগর ‘বৃহত্তর সিন্ধু উপত্যকা'র ভৌগোলিক পরিবেশ বিশ্লেষণ করে দুটি বিষয়ের উপর জোর দিয়েছেন। প্রথমত, উক্ত এলাকার ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যর সঙ্গে ভারতীয় মূল ভূখণ্ডের চেয়ে মেসোপটেমিয়া এবং সুমের অঞ্চলের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যর মিল অনেক বেশি। দ্বিতীয়ত, এই অঞ্চলের কয়েকটি সীমিত এলাকাকে বাদ দিলে ধাতুর উৎস বিশেষ ক্ষীণ। কিন্তু হরপ্পীয় কারিগরেরা ধাতুর ব্যবহারে দক্ষ ছিলেন এবং যেসব ধাতু হরপ্পীয় সভ্যতার ভৌগোলিক সীমানার মত পাওয়া যেত না তাদের বাণিজ্যের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হত। অন্তর্দেশীয় বাণিজ্য এবং বহির্দেশীয় বাণিজ্যই হরপ্পার নাগরিকেরা নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন এবং পরিণত হরপ্পীয় সভ্যতার ‘বাণিজ্য চিত্ৰ' অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখননের দ্বারা বাণিজ্যের বহু উপাদান আফগানিস্তানের থেকে শুরু করে পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন স্থানে পাওয়া গেছে। এমন কি! সুদূর গ্রীস, সিরিয়া ও মিশরেও হরপ্পীয় সংস্কৃতির বস্তুগত উপাদান খুঁজে পাওয়া গেছে। উপাদানগুলির পরিমাণ এবং প্রাপ্ত বস্তুর ধারাবাহিকতা থেকে বাণিজ্য ছাড়া আর কোন সম্ভাবনার কথা প্রত্নতত্ত্ববিদদের মনে হয়নি। বস্তুত, বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে হরপ্পীয় সভ্যতাকে নতুনভাবে বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

আফগানিস্তানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত সোর্টুগাই খ্রিঃ পূঃ তৃতীয় সহস্রাব্দ থেকে এক প্রান্তবর্তী বাণিজ্যকেন্দ্রের ভূমিকা নিয়েছিল। হরপ্পা সভ্যতার বহু বৈশিষ্ট্য এই অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায় এবং বিভিন্ন মূল্যবান পাথর, বিশেষ করে 'লাপিস লাজলী' এখান থেকে সংগ্রহ করে দূরবর্তী দেশগুলিতে রপ্তানি করা হত। বাদখশনের লাপিস লাজুলীখনির অবস্থান এবং এখান থেকে সোর্টুগাই-এর নৈকট্য ইত্যাদির কারণে সোর্টুগাইকে বিশেষভাবে ব্যবহার করা হত। দক্ষিণ তুর্কমেনিয়াতে হরপ্পীয় যুগের হাতির দাঁতের খেলবার জিনিস, তামার তৈরি জিনিস, সিলমোহর, মাটির পাত্র এবং বিভিন্ন ধরনের পুঁতি পাওয়া গেছে। দক্ষিণ তুর্কমেনিয়াতে তামা বিরল ধাতু তাই মনে হল তাম্রনির্মিত জিনিসগুলি সিন্ধুসভ্যতা এলাকা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল এবং সম্ভবত এই যোগাযোগ ২৫০০ খ্রিঃ পূর্বাব্দ থেকে ২২০০ খ্রিঃ পূর্বাব্দের মধ্যে হয়েছিল। উত্তর ইরানে হিসার, শাহটেমি, মারলিক ইত্যাদি স্থানে হরপ্পীয় প্রত্নবস্তুর দেখা পাওয়া গেছে। এলাহাবাদে প্রাপ্ত পুঁতিগুলি হরপ্পীয় কারিগরির নমুনায় তৈরী এবং হরপ্পা থেকে এগুলি আমদানি করা হত। এছাড়াও বৃহৎ স্থাপত্য কীর্তি হিসেবে আক্কাদীয় সভ্যতার আমলে নির্মিত স্থাপত্য নমুনার সঙ্গে হরপ্পীয় সভ্যতার মিল দেখা যায়। পারস্য উপসাগরের উপকূলের বহু স্থানে প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখনন করা হয়েছে। সেখানে প্রাপ্ত বিভিন্ন প্রত্নবস্তুর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল বিভিন্ন ওজনের নমুনা। আকৃতি এবং ওজনের দিক থেকে এগুলি সম্পূর্ণভাবে হরঞ্জীয় এলাকার ওজনের অনুরূপ। বাহরিনের প্রথম বাণিজ্য যোগাযোগ সিন্ধুসভ্যতার মাধ্যমে হয়েছিল এবং বাহরিনের কাছে মেসোপটেমিয়ার চেয়ে হরপ্পীয় বণিকরা বেশী গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ব্যাপক সিন্ধুদেশের ওজনের ব্যবহার এই প্রবণতার দিকেই ইঙ্গিত দেন।

মেসোপটেমিয়াতে বিভিন্ন ধরনের হরঙ্গীয় প্রত্নবস্তুর সমাবেশ দেখা যায়। এইসব কারণে স্বাধীনতার পূর্বকাল থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত স্বদেশীয় এবং বিদেশীয় বহু প্রত্নতত্ত্ববিদ্ হরপ্পা মেসোপটেমিয়া বাণিজ্যিক যোগাযোগ নিয়ে আলোচনা করেছেন। মেসোপটেমিয়ার কিল অঞ্চলে ১৯২৩ সালে প্রথম সিন্ধুসভ্যতার বৈশিষ্ট্যযুক্ত সিলমোহর পাওয়া যায়। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে এবং বিভিন্ন স্থানে হরপ্পীয় সিলমোহর আবিষ্কার হচ্ছে। সি. জে. গড মেসোপটেমিয়ার উর প্রত্নক্ষেত্র থেকে ১৮টি সীলমোহর আবিষ্কার করেন। এর ফলে হরপ্পীয় সীলের সাযুজ্য নিয়ে বহু আলোচনা করা হয়েছে এবং সীলমোহরগুলিকে সিন্ধু-পারস্য উপসাগরীয় এলাকা এবং মেসোপটেমিয়াতে বাণিজ্যের কাজে ব্যবহার করা হত তাতে কোন সন্দেহ নেই। এ ছাড়া কার্নেলিয়ান পাথরে নির্মিত এবং কার্নেলিয়ান ছাড়াও ল্যাপিস লাজুলী, চ্যালসিডনি, অ্যাগেট ইত্যাদি পাথরের তৈরী পুঁতি সমগ্র মেসোপটেমিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া গেছে। এই পুঁতিগুলি ভারতে তৈরী এবং ব্যবসার জন্যে প্রেরিত হয়েছিল এটা ভাববার যথেষ্ট যুক্তি আছে। মেসোপটেমিয়ার টেল আসমার, উর ইত্যাদি স্থানে ভারতীয় পাশাখেলা বোধহয় খুব জনপ্রিয় ছিল; কারণ এইসব স্থানে ভারতীয় ধাঁচে নির্মিত পাশাখেলার গুটি পাওয়া গেছে। এই দৃষ্টান্তকে বাণিজ্য থেকে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের একটি দৃষ্টান্ত বলে ধরতে পারি। আই. ই. ম্যাক, এম. আর. রাও, দিলীপ চক্রবর্তী বিভিন্ন দৃষ্টান্ত সহযোগে দেখাবার চেষ্টা করেছেন যে সিরিয়া, মিশর, ক্রীট ইত্যাদি অঞ্চলেও হরপ্পীয় সভ্যতার যোগাযোগ ছিল। পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশে যদি হরপ্পীয় প্রত্নবস্তু পাওয়া যায়, তাহলে হরপ্পা অঞ্চলে পশ্চিমএশীয় প্রত্নবস্তু পাওয়া দরকার। সেক্ষেত্রেই বাণিজ্যবস্তুর বিনিময়যোগ্যতা প্রমাণ করা সম্ভব। কিন্তু হরপ্পীয় এলাকার বিদেশীয় প্রত্নবস্তুর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। শিরিন রত্নাগর সমস্যাটির সমাধান করার চেষ্টা করেছেন। তার মতে মেসোপটেমিয়া ভোগ্যপণ্য রপ্তানী করত এবং কৃষির দিক থেকে দুর্বল দেশগুলির কাছ থেকে অন্য পণ্যের বেশী করে দাবি করত।

সীলমোহর এবং অন্যান্য কিছু বিদেশীয় প্রত্নবস্তুর উপস্থিতি অলোচনা করলে দেখা যাবে যে গোলাকার বেশ কয়েকটি সীলমোহর হরপ্পীয় এলাকায় অনুপ্রবেশকারী সিলমোহর বলা যেতে পারে। এই সীলমোহরগুলি মহেঞ্জোদড়ো, হরপ্পা, চানহুদারো, বাহারিন, ফাইলকা অঞ্চলে পাওয়া যাচ্ছে। দিলীপ চক্রবর্তী মনে করছেন যে, এইগুলি সিন্ধু পারস্য উপসাগর মেসোপটেমিয়া অঞ্চলে বাণিজ্যের জন্যই ব্যবহার করা হত। বহু পূর্বে প্রায় ১৯৩১ সালে হাতির দাঁতের নির্মিত চোঙ আকৃতির পাঁচটি সীলমোহরের উল্লেখ করেছেন।

মার্শালের অভিমত এই যে সুমারে প্রাপ্ত সীলমোহরগুলির সঙ্গেই এদের মিল বেশি। বি. বি. লাল কালিবাঙ্গনে অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ চোঙ আকৃতির সীলমোহরের কথা উল্লেখ করেছেন। বিদেশী আকৃতির এই সীলমোহরটিতে কোন দেবতার কাছে নারীবলি চিত্র অঙ্কন করা হয়েছে? উদ্দেশ্যটি এখনও স্পষ্ট নয়। পারস্য উপমহাসাগরের নির্মিত সীলমোহর লোথালে পাওয়া যায়, এদের প্রত্যেকটির গায়ে ছবি আঁকা আছে তা হরপ্পীয় বৈশিষ্ট্যের বিপরীত। শুধু লোথাল নয়, এরকম সীলমোহর হরপ্পা এবং মহেঞ্জোদড়োতেও খুঁজে পাওয়া যায়। নাগপুর মিউজিয়ামে রক্ষিত একটি সীলমোহরের কথা আলাদা করে বলা যায়, কারণ এই সীলমোহরটির তারিখ ২০০০ খ্রিঃ-এর বলে নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু কীভাবে ভারতে প্রবেশ কলর তা নিয়ে সদুত্তর পাওয়া যায়নি। ফ্রারি ১৯৩৭ সালে মহেঞ্জোদড়োতে একটি সুমেরীয়-ব্যাবিলনীয় লেখমালা খুঁজে বলেছেন, আধুনিক পণ্ডিতেরা মনে করেছেন যে এর সঙ্কেতলিপিগুলি হরপ্পীয় সঙ্কেতলিপির সঙ্গে একরকম নয়। সীলমোহর ছাড়া অন্যান্য প্রত্নবস্তুর মধ্যে ডাবারকেটে প্রাপ্ত একটি পাথরের নির্মিত পুরুষ-মস্তক, সেখানে প্রাপ্ত বেশ কিছু মৃৎপাত্রের কথা আলোচনা করা দরকার। লোথালের মৃৎপাত্রগুলি স্পষ্ট স্থানীয় নির্মাণ নয় এবং যেখানে পাওয়া গেছে সেটি ছিল বণিকদের আবাসস্থল। সুতরাং সমুদ্র বাণিজ্যের সূত্র ধরেই তারা ভারতে প্রবেশ করেছিল।

হরপ্পীয়দের ধর্মীয় জীবন :

হরপ্পীয়দের ধর্মভাবনা ও ধর্মাচার সম্পর্কে আমাদের ধারণা অনেকটাই অনুমান নির্ভর। এক্ষেত্রে আমাদের নির্ভর করতে হয় মূলত বিভিন্ন সীল, নারীমূর্তি ও প্রস্তরমূর্তির ওপর। আবিষ্কৃত নিদর্শন বা স্থাপত্যের ধ্বংসাবশেষ থেকে তৎকালীন ধর্মাচার সম্পর্কিত অনুমানের সাথে পরবর্তীকালের ধর্মাচারের সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়াও কষ্টকর নয়। কিন্তু সব ধারণাকে যুক্তি দ্বারা সমর্থন করা সম্ভব হয় না। হরপ্পা সভ্যতার কালে মন্দিরের অস্তিত্ব ছিল কিনা; বৈদিক ধর্মভাবনার সাথে হরপ্পীয় ধর্মচিন্তার মিল কতটা ; কিংবা ‘হিন্দু' দেবদেবী ও আরাধনা পদ্ধতির সাথে হরপ্পীয়দের ধর্মীয় নিদর্শনগুলিকে মেলানো সঠিক হবে কিনা—এই সকল প্রশ্নে প্রত্নবিদ ও ঐতিহাসিকেরা এখনো বহু ক্ষেত্রে সহমত হতে পারেননি। যেমন খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতকের আগে ভারতবর্ষে দেবমন্দির (দেবতা সহ মন্দির) নির্মাণ স্থাপত্য অজানা ছিল, অথচ মহেগ্বোদড়োর দূর্গ এলাকা ও নীচের বসতি এলাকার কয়েকটি বাড়িকে মন্দির বলে ভাবা হয়েছে। আবার কয়েক শতকব্যাপী পরিবর্তনের মাধ্যমে 'হিন্দুত্বের উদ্ভব ঘটেছে। এর একটি হল বৈদিক স্তর, যেখানে ধর্মাচারের প্রধান অঙ্গ ছিল যাগযজ্ঞ, বলিদান ইত্যাদি। শেষে এসেছে পুরানের স্তর (তৃতীয় শতক) যখন অসংখ্য নতুন নতুন দেবদেবীর আবির্ভাব ঘটেছে। এই দুয়ের মাঝে ছিল পশুবলি, যাগযজ্ঞের বিরোধী একটা অনুশীলনবাদী, রহস্যময়তা ভরা, কঠোর সংযমের স্তর। তাই হরপ্পা সভ্যতাকালীন ধর্মভাবনার মধ্যে হিন্দুধর্মের পূর্বাভাস বা আদিরূপ খোঁজার চেষ্টা যুক্তিযুক্ত হবে না। তবে হরপ্পার ধর্মভাবনার সাথে পরবর্তীকালের ধর্মভাবনার বর্হিরঙ্গে কিছু কিছু মিল দেখতে পাওয়া অসঙ্গত হবে না।

হরপ্পার প্রত্নক্ষেত্রগুলিতে অসংখ্য অর্ধ-নগ্ন, দণ্ডায়মানা পোড়ামাটির নারীমূর্তি পাওয়া গেছে। সম্ভবত সেগুলি আরাধ্যা মাতৃকাদেবীর মূর্তি। কোন কোন মূর্তির দেহে ধোঁয়ার চিহ্ন স্পষ্ট। অনুমিত হয় যে, দেবীকে সন্তুষ্ট করার জন্য তৈল প্রদীপ বা ধূপ জ্বালানো হত। হরপ্পার একটি সীলে নরবলির আভাস পাওয়া যায়। একটি সীলে সাতটি নারীমূর্তি খোদিত আছে। যা ‘সপ্তমাতৃকার' ধারণা দেয়। একটি নারীমূর্তির স্ত্রী অঙ্গ থেকে একটি গাছ বেরিয়ে আসছে। এটিকে কেউ কেউ ‘শাকম্ভরী’ দেবীর দ্যোতক বলেছেন। অন্যদিকে দেবীকে প্রজননের প্রতীক বলে হরপ্পীয়দের বিশ্বাসের দৃষ্টান্ত হিসেবেও এটিকে ব্যাখ্যা করা যায়। মহেঞ্জোদড়োর একটি সীলে যোগারূঢ় এক পুরুষমূর্তি অঙ্কিত দেখা যায়। এই মূর্তি ত্রিমুখ, উধলিঙ্গ, মস্তকে সিং বসানো শিরস্তান, মূর্তির বাহু দুটি বালায় ঢাকা, দু'পাশে ছোট ছোট পশুমূর্তি – একপাশে গণ্ডার ও মহিষ, অন্যপাশে হাতি ও বাঘ। জন মার্শাল এটি পশুপতি শিবের আদিরূপ হিসেবে চিহ্নিত করে হিন্দু সংস্কৃতির সাথে হরপ্পীয়দের সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করেছেন। হিন্দুদেবতা শিবের সাথে এই পুরুষমূর্তির আপাতসাদৃশ্য অগ্রাহ্য করা যায় না। শিবের মতই আলোচ্য মূর্তিটি যোগারূঢ়, ত্রিশূলধারী (সিংযুক্ত শিরস্ত্রাণ) এবং পশু পরিবৃত (পশুপতি)। ব্যাসাম এটিকে সরাসরি শিব না-বলে বৈদিক রুদ্র-শিবের প্রতিকৃতি বলে সনাক্ত করেছেন। কিন্তু এই সকল অভিমত সর্বজনগ্রাহ্য নয়। শিরিন রত্নাগর দৃঢ়তার সাথে উপরোক্ত মতের বিরোধীতা করেছেন। তাঁর মতে, 'বৈদিক পশুপতি' হলেন গৃহপালিত পশুজোতের দেবতা। তিনি চারণভূমিতে গবাদি পশুদের রক্ষা করেন। তাঁর বাহন ষাঁড়। অরণ্যের হিংস্র পশুদের সাথে তাঁর সম্পর্ক নেই। কিন্তু হরপ্পার সীলমোহরে অঙ্কিত মূর্তিটি বাঘ, হাতি, গণ্ডার প্রভৃতি বন্যপ্রাণী পরিবেষ্টিত। ষাঁড়ের অস্তিত্ব এখানে নেই। তাই এই মূর্তিটিকে পশুপতি শিবের সাথে সনাক্ত না করে বরং বন্য পশুদের বশীভূত করতে সক্ষম কোন সাধকপুরুষ মনে করা বেশী সঙ্গত হবে। কারও কারও মতে, প্রাক্‌-এলেমীয় সীলমোহরের সাথে (খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০-২৭৫০ অব্দ) এই হরপ্পীয় মূর্তিটির বেশী সাযুজ্য আছে।

কালিবনগানের সাম্প্রতিক প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখনন হরপ্পীয়দের ধর্মভাবনা ও ধর্মাচার সম্পর্কে একটা নতুন দিক্ উন্মোচন করেছে। এখানে প্রতিরক্ষা দূর্গের দক্ষিণের বিভাজিত অংশে অগ্নিবেদী সদৃশ উঁচু চাতাল, কূপ, স্নান করার স্থান পাওয়া গেছে। পাওয়া গেছে সাতটি হোমকুণ্ড, ছাই আর পোড়ামাটির ফলকে পূর্ণ করা গর্ত। ছাই ও পোড়ামাটির সাথে মিশে আছে পশুর হাড়গোড়। সম্ভবত এখানে সমবেতভাবে ধর্মীয় আচারবিধি পালন করা হত। প্রত্নতাত্ত্বিক অবশেষ থেকে অনুমিত হয় যে, তখন অগ্নি-উপাসনা, বলিদান ইত্যাদি প্রচলিত ছিল। কালিবগান ছাড়াও লোথাল, নাগেশ্বর প্রভৃতি স্থানের বসত-এলাকায় বাড়িগুলিতে অগ্নি প্রজ্বলনের আলাদা কক্ষের অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয়েছে। সম্ভবত গৃহস্থের প্রাত্যহিক পারিবারিক অনুষ্ঠানের স্থান ছিল এগুলি। ব্রিজেট অলচিন সম্পাদিত 'সাউথ এশিয়ান আর্কিওলোজি' গ্রন্থে অধ্যাপিকা ইলদিকো পুসকাস হরপ্পীয়দের ধর্মভাবনার বিষয়ে নতুনভাবে আলোকপাত করেছেন। তিনি হরপ্পীয় সভ্যতার অভিজাতগোষ্ঠী অর্থাৎ পুরোহিত, শাসক, বণিক প্রমুখের ধর্মাচারের সাথে সাধারণ মানুষের ধর্মাচারের মধ্যে একটি বিভাজন রেখা টানার পক্ষপাতী। ত্রিমুখবিশিষ্ট দেবতা, যিনি সৃষ্টি এবং ধ্বংসের প্রতীক, তিনি অভিজাতগোষ্ঠীর উপাস্য ছিলেন। অন্যদিকে লোকায়ত ধর্মাচারের মধ্যে ছিল মাতৃকাশক্তি, লিঙ্গ পূজা ইত্যাদি। হরপ্পার বিভিন্ন প্রত্নক্ষেত্রে অসংখ্য লিঙ্গ ও যোনিলিঙ্গ পাওয়া গেছে। ডি. এন. ঝা'র মতে, হরপ্পা সভ্যতায় লিঙ্গ উপাসনার রীতি জনপ্রিয় ছিল। ঋগ্বেদে এই উপাসনার নিন্দা করা হলেও, পরবর্তীকালে ভারতীয় সমাজে লিঙ্গপূজার প্রচলন দেখা যায়। মৃত্তিকা নির্মিত লিঙ্গমূর্তি উপাসনা করে প্রতিদিন সকালে তা বিসর্জন করার প্রথাটির দিকে অধ্যাপক ঝা দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

হরপ্পাসভ্যতায় ধর্মাচারের অঙ্গ ছিল পশুর উপাসনা। সীলগুলিতে বিভিন্ন পশুর প্রতিকৃতি দেখা যায়। একশৃঙ্গী চতুষ্পদ একটি প্রাণী সেকালে বিশেষ পরিচিত ছিল। এটিকে প্রত্নতাত্ত্বিকরা 'ইউনিকর্ণ (Unicorn) নামে অভিহিত করেছেন। পশুটির কপাল থেকে একটি শিং বেরিয়ে আছে। কোন কোন সীলে প্রাণীটির সামনে ধূপ, দীপ রাখার ছবিও উৎকীর্ণ করা আছে। তবে বাস্তবে এধরনের কোন জীব দেখা যায় না। সম্ভবত হরপ্পীয়রা কল্পিতভাবে এই পশুর রূপায়ণ ও আরাধনার ব্যবস্থা করেছিলেন। তবে বহু সীলমোহরে ষাঁড়ের (বৃষ) প্রতিকৃতি দেখা গেছে। হরপ্পা সভ্যতায় বৃষের ধর্মীয় তাৎপর্য যথেষ্ট ছিল বলেই মনে হয়। হরপ্পার কোন সীলে গাভীর প্রতিকৃতি দেখা যায় না। তাই অনুমান করা হয় যে, সেকালের ধর্মাচারের সাথে গাভীর কোন সংযোগ ছিল না। মহেঞ্জোদড়োর একটি সীলে বৃষ, হাতি ও বাঘের বিভিন্ন অঙ্গের সমাহারে গঠিত একটি পশুমূর্তি উৎকীর্ণ আছে। এটিও কল্পিত পশুরাজের ধারণা থেকে সৃষ্টি মনে হয়। অপর একটি সীলে শিংবিশিষ্ট একটি নারীকে শিংবিশিষ্ট একটি বাঘের পিঠে আসীন অবস্থায় দেখা যায়। শিরিন রত্নাগর এদের ‘পৌরাণিক পশু’ বলে নামাঙ্কিত করেছেন। এক্ষেত্রেও হরপ্রীয় কল্পনাপ্রবণতা ও পশু-উপাসনার প্রতি বিশেষ আগ্রহের পরিচয় পাওয়া যায়।

হরপ্পাসভ্যতার ধর্মভাবনার বৃক্ষ-উপাসনাও গুরুত্ব পেত। সীলমোহরে পিপুল গাছ ও পিপুলপাতার মধ্যে আত্মা ও অধিষ্ঠাত্রী দেবীর উপস্থাপনা দেখা যায়। শিং আর শুয়োরের লেজবিশিষ্ট এক ব্যক্তিকে পিপুলগাছে দেখা যায়। বৃক্ষের নিচে হাঁটু মুড়ে বসে আছেন। ইনি সম্ভবত উপাসক। একেবারে নিচে আছে সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান সাতটি মূর্তি। প্রতিটিতে আছে বিনুনী, শিং, লেজ আর খুরওয়ালা পা। এরা কি মুখোশধারী নতর্ক? নাকি পুরোহিত? আর একটি সীলে দুটি বাঘের সাথে যুদ্ধরত একজন বীরকে দেখা যায়। এই বীরের গোলাকার মুখ সূর্যের প্রতীক এবং অন্ধকারে শিকারসন্ধানী বাঘ দুটি অন্ধকারের প্রতীক। এই সীলটি মেসোপটেমিয়ার বিখ্যাত ‘গিলসামেস' মহাকাব্যের কথা মনে করিয়ে দেয়, এটিকে উভয় সংস্কৃতির ঐক্যের দৃষ্টান্ত হিসেবে গ্রহণ করা যায়।

দিল্লীর জাতীয় সংগ্রহশালা বা মহেঞ্ঝোদড়োর যাদুঘরে সংরক্ষিত তাম্রফলকে ওঝা-পুরোহিতদের যাদুকরী ধর্মক্রিয়ার চিহ্ন পাওয়া যায়। ওঝা-পুরোহিত শাসিত ধর্মাচরণের কেন্দ্রীয় বিষয় ছিল ‘সর্বপ্রাণবাদ'। এই বিশ্বাসের সারকথা হল, গাছগাছালি, পশু, পাখি বা সাপ সকলের আত্মা বা প্রাণ আছে এবং এই আত্মা যে কোন সজীব আত্মার সাথে ভাববিনিময় করতে সক্ষম। একজন সামান বা ওঝার মধ্যস্থতায় এমন ভাববিনিময় করানো সম্ভব হয়। শিরিন রত্নাগর লিখেছেন, ‘পাতার পোষাক পরা, তীর ধনুক হাতে মূর্তিটি সম্ভবত কোন শিকারীর। কিংবা তার মাথায় শিং-ওয়ালা মস্তকাবরণটি দেখলে মনে হয় এটি বুঝি কোন দেবমূর্তি। হতে পারে এ-কোনো ওঝা-পুরোহিত বা সামান।”

মৃত্যু ও মৃত্যু-পরবর্তী জীবনসম্পর্কে হরপ্পীয়দের বিশ্বাসের ধারণা পাওয়া যায় তাদের অন্ত্যেষ্টিপ্রক্রিয়া থেকে। সেকালে মৃতদেহ সৎকারের প্রধান রীতি ছিল সমাধিদান। মৃতদেহের সাথে দেওয়া হত ঐ ব্যক্তির ব্যবহার্য জিনিসপত্র এবং খাদ্য ও পানীয়। উত্তর-দক্ষিণে শায়িত মৃতদেহকে সমাধিস্থ করা হত। হরপ্পার সমাধিক্ষেত্রগুলিকে দু'টি পর্যায়ে বিভক্ত করা হয়েছে—'সমাধিক্ষেত্র আর-৩৭' (Cemetry R-37) এবং 'সমাধিক্ষেত্র-এইচ' (Cemetry-H)। সমাধিক্ষেত্র-এইচ তুলনামূলকভাবে পরবর্তীকালের। এখানে প্রাপ্ত মৃৎপাত্রগুলি সমাধিক্ষেত্র-৩৭-এর তুলনায় উন্নত, মসৃণ ও উজ্জ্বল। লোথালের সমাধিক্ষেত্রে পাশাপাশি শায়িত একজন নারী ও একজন পুরুষের কঙ্কাল আবিষ্কৃত হয়েছে। তবে এটিকে সহমরণ প্রথার দৃষ্টান্ত হিসেবে মানতে অনেকেই অস্বীকার করেছেন। কোন কোন ক্ষেত্রে মৃতদেহ দাহ করা হত, হয়ত বা নদীতে ভাসিয়েও দেওয়া হত। অবশ্য সমাধিক্ষেত্র ছাড়া অন্য পদ্ধতিগুলির ব্যবহার বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই।

হরপ্পীয়দের রাষ্ট্রীয় জীবন :

হরপ্পা সভ্যতার আমলে রাজনৈতিক বিন্যাস কেমন ছিল? কেন্দ্রীয় রাজতন্ত্রের অস্তিত্ব ছিল কিনা? এ সকল প্রশ্নের চূড়ান্ত মীমাংসা এখনো হয়নি। হরপ্পা সভ্যতার প্রকৃতি ও আনুসাঙ্গিক ঘটনাবলী বিচার করে প্রত্নবিদ-ঐতিহাসিকরা নানারকম সম্ভাবনার কথা বলেছেন। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে হরপ্পা সংস্কৃতির বিকাশ, উন্নত নগরপরিকল্পনা, লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে শত শত সীলমোহরের ব্যবহার, হস্তশিল্পের বিচিত্র সম্ভার ইত্যাদির প্রেক্ষিতে মনে করা যেতে পারে যে, সংগঠিত প্রয়াস ছাড়া কোন সভ্যতা এতটা পরিকল্পিত, সুবিন্যস্ত ও সুদূর প্রসারিত রূপ নিতে পারে না। এজন্য চাই সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং সুবিন্যস্ত নিয়ন্ত্রণ। অপরিণত ও পরিণত পর্যায়ের হরপ্পা সভ্যতার প্রায় সহস্র বছরব্যাপী সূচনা ও বিকাশের পশ্চাদপটে অবশ্যই স্থিতিশীল ও শক্তিশালী একটি বা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত একাধিক সংগঠনের অস্তিত্ব ছিল। শিরিন রত্নাগরের ভাষায়, প্রতিষ্ঠান যতই অপরিণত হোক, উচ্চশ্রেণীর শাসন যতই ব্যক্তিগত হোক না কেন, হরপ্পীয় সময়ে রাষ্ট্রের (অথবা রাষ্ট্রসমূহের) অস্তিত্ব তর্কাতীত। তবে অবশ্যই আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা কিংবা উত্তর-মধ্যযুগীয় নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্রের অস্তিত্ব হরপ্পীয় যুগে খোঁজা সঠিক হবে না।




অলচিন দম্পতি, স্টুয়ার্ট পিগট প্রমুখ মনে করেন যে, রাজনীতির বিচারে হরপ্পা সভ্যতার ব্যাপক বিস্তৃতি একটি সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব নির্দেশ করে। এই সাম্রাজ্যের দু'টি প্রধান প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল মহেঞ্জোদড়ো ও হরপ্পা। এই সাম্রাজ্যের শাসব নাম করতেন নগর-দূর্গে। দূর্গ সংলগ্ন বিশাল শস্যাগার তাঁর অর্থনৈতিক শক্তির পরিচায়ক। কোশাম্বি এই মতের বিরোধীতা করেছেন। ইরফান হাবিব মন্তব্য করেছেন যে, হরপ্পা-সংস্কৃতি যে দ্রুততার সাথে বিস্তীর্ণ এলাকায় সম্প্রসারিত হয়েছিল, তা কেবল যুদ্ধ বিজয় দ্বারাই সম্ভব। কিন্তু এ-জন্য যে অস্ত্রাদির প্রয়োজন হরপ্পীয়দের তা ছিল না। সিন্ধু উপত্যকার প্রধান স্তরগুলিতে কোন তরোয়াল পাওয়া যায়নি। সমকালীন মেসোপটেমিয় সভ্যতায় ব্যবহৃত কুঠার, তীরফলক বা বর্শাফলকের মতো ধাতব অস্ত্রশস্ত্রও হরপ্পা সভ্যতার প্রত্নক্ষেত্রে পাওয়া যায়নি। মাটিমার হুইলার হরপ্পার যে কাঠামোটিকে সেনানিবাস (ব্যারাক) বলে চিহ্নিত করেছেন, তা আয়তনে এত ছোট যে একটি বৃহৎ সাম্রাজ্যের সেনাবাহিনীর আবাসস্থল হিসেবে গণ্য করা যায় না। অবশ্য সম্মুখ যুদ্ধের উপযোগী শিরস্ত্রাণ এবং পোড়ামাটির ক্ষেপনাস্ত্র জাতীয় কিছু উপাদান পাওয়া গেছে। নিম্নমানের কিছু কিছু অস্ত্রও ছিল। তবে যুদ্ধ দ্বারা রাজ্য জয়ের জন্য সেগুলি আদৌ যথেষ্ট ছিল না।




এ. এল. ব্যাসাম, মাটিমার হুইলার, শিরিন রত্নাগর সহ অধিকাংশ পণ্ডিত মনে করেন যে, হরপ্পীয় রাষ্ট্র পরিচালন ব্যবস্থার সাথে ধর্মের বিশেষ যোগ ছিল। ব্রোঞ্জযুগের প্রায় সকল শাসকই সম্ভবত পুরোহিত-রাজা (Priest King) ছিলেন। ‘তবে সকল ক্ষমতার উৎস ছিল ধর্ম —পশ্চিমী লেখকদের এমন ব্যাখ্যা সঠিক নয়। মহেঞ্জোদড়োর প্রতিরক্ষা দূর্গ, গণ উৎসবের কেন্দ্র, স্নানাগার, সাধারণ নাগরিকদের বিচার নিষ্পত্তির জন্য নির্দিষ্ট স্থান (স্তম্ভবিশিষ্ট কক্ষ) ইত্যাদি একটি কেন্দ্রীভূত শক্তির অস্তিত্ব প্রমাণ করে। তবে এই রাষ্ট্রব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য কিরূপ ছিল? সম্ভবত হরপ্পীয় শাসনব্যবস্থা একটি আদিম জনজাতীয় ব্যবস্থার ওপর গড়ে উঠেছিল। কেবল বলপ্রয়োগ করে কিংবা প্রশাসনিক নির্দেশ জারী করে সমগ্র হরপ্পীয় এলাকায় শাসন পরিচালনা করা যেত না। সম্ভবত গ্রামীণ জনগোষ্ঠী তাদের গোত্র, কুলের ভিত্তিতে তখনও সংঘবদ্ধ থাকত। কেন্দ্রীয় শাসক নানা উপায়ে, যেমন বিবাহসূত্রে, উপহার প্রদান করে কিংবা ঘনিষ্ঠ কোন আত্মীয় পরিজনের গোষ্ঠীকে দূরবর্তী এলাকায় বসতি গড়ার ব্যবস্থা করে, প্রশাসনিক কর্তৃত্ব প্রয়োগ করতেন। শিরিন রত্নাগরের মতে, সেকালে প্রকৃত আমলাতন্ত্রের অস্তিত্ব ছিল না। তাই হরপ্পীয় শাসনব্যবস্থা ব্যক্তিবর্গের পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর অধিক পরিমাণে নির্ভরশীল ছিল।


আশা করি আমার ভাই বোনের এই পোস্টটি অনেক ভালো লেগেছে। এর সাথে হরপ্পীয়দের রাষ্ট্রীয় জীবন, হরপ্পীয়দের ধর্মীয় জীবন ও হরপ্পীয়দের অর্থনৈতিক জীবন বিষয়টিও তোমরা বুঝতে পেরেছ। যদি এই পোস্টটি থেকে কিছু উপকার পাও, তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে কখনো ভুলবেন না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন