প্রাচীন ভারতে সাহিত্য: আসসালামু আলাইকুম ভাই ও বোনেরা আপনারা কেমন আছেন? আশা করি ভালো আছেন, আমিও আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি, আপনাদের স্বাগতম জানাচ্ছি লাখ পড়া মাইমুনা তে। আমার নাম মাইমুনা, আজকে আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা আপনাদের বিভিন্ন জায়গায় লাগতে পারে।
আমি জানি আপনারা “প্রাচীন ভারতে সাহিত্য” বিষয়ে ধারণা নিতে অনলাইনে খোজাখুঝি করছেন।আর আপনি এখন একদম সঠিক পোস্ট এ আছেন। এখানে আপনি এই বিষয়টি সম্পর্কে সব ভালো ভাবে জানতে পারবেন।
প্রাচীন ভারতে সাহিত্য
প্রাচীন ভারতে সাহিত্য:
প্রাচীন ভারতে প্রায় সকল কাজের উৎস ও পরিচালক ছিল ধর্ম। তাই সাহিত্যচর্চার কাজেও ধর্মের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। মূলত ধর্মভাবনার নানা দিককে কেন্দ্র করে সাহিত্যচর্চার কাজ শুরু হয়েছিল।
তবে ধর্মীয় বিষয়বস্তুকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা প্রাচীন সাহিত্যকর্মের মধ্যে সমসাময়িক সমাজভাবনা, শাসনধারা ইত্যাদিরও প্রকাশ দেখা যায়। প্রাচীন ভারতে সাহিত্যচর্চার অগ্রগতির ইতিহাসকে দুটি পর্বে ভাগ করা যায়। প্রথম ভাগের পরিধি মৌর্য যুগের সূচনা থেকে গুপ্তশাসন প্রতিষ্ঠার আগে পর্যন্ত। অর্থাৎ খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ থেকে খ্রিষ্টীয় ৩০০ শতক। এবং দ্বিতীয় পর্ব খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতক থেকে অষ্টম শতক পর্যন্ত।
এই পর্বে সাহিত্যচর্চার প্রধান মাধ্যম ছিল সংস্কৃত ভাষা। এছাড়া পালি, অর্ধ-মাগধী ও প্রাকৃত ভাষাতেও বহু সাহিত্য চর্চা হয়েছিল। দক্ষিণ ভারতে সাহিত্যচর্চার প্রধান মাধ্যম ছিল তামিল ভাষা। অন্যান্য ভাষার মধ্যে কন্নড়, তেলেগু ও মালায়ালম ভাষাতেও বহু জনপ্রিয় সাহিত্য সৃষ্টি সম্ভব হয়েছিল। আমাদের বর্তমান আলোচনার মূল বিষয় হল ধর্মনিরপেক্ষ সাহিত্য। তবে আনুসাঙ্গিক ভাবে ধর্মীয় সাহিত্যের উল্লেখ থাকা অপ্রাসঙ্গিক হবে না।
প্রাচীন ভারতের সংস্কৃত সাহিত্য : প্রাক্-গুপ্তযুগ
সাধারণ বিচারে সংস্কৃত ভাষা-সাহিত্য গুপ্তযুগে খ্যাতির চূড়ায় আরোহণ করেছিল। কালিদাসের সমসাময়িক অমর সিংহ প্রণীত ‘নামলিঙ্গানুশাসন' গ্ৰন্থকে প্রাচীন সংস্কৃত ভাষার শ্রেষ্ঠ অভিধান বলা হয়।
সাধারণভাবে এটি ‘অমর কোষ' নামে বেশি পরিচিত। তবে এই কাজে প্রথম কৃতিত্ব দেখান খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতকের বৈয়াকরণিক পাণিনি। তাঁর ব্যাকরণের নাম ‘শব্দানুশাসন'। আট অধ্যায়ে বিভক্ত বলে একে ‘অষ্টাধ্যায়ী’বলা হয়। পাণিনি তাঁর গ্রন্থে সংস্কৃত ভাষার সংজ্ঞা এমনভাবে নির্দেশ করেছিলেন, যা একটি ‘ভাষা’ বা ভাবপ্রকাশের মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতকে উত্তর-পশ্চিম ভারতে প্রধান বিদ্যাচর্চার কেন্দ্র তক্ষশিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি ছাত্র ছিলেন পাণিনি।
তিনি পূর্ববর্তী চৌষট্টি জন বৈয়াকরণিকের নাম উল্লেখ করেছেন, যদিও তাঁদের কোন পুস্তক উদ্ধার করা যায়নি। পাণিনি সেই সংস্কৃত ভাষার প্রধান রূপকার বলা যায়। এই ভাষাকে তিনি ধাতুরূপ, শব্দ সম্পদ, স্বর সংঘাতের দিক থেকে সহজ-সরল করে ভাব প্রকাশের যথাযোগ্য বাহন করেছিলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, বর্তমানে সংস্কৃত ভাষা দেবনাগরী অক্ষরে লেখা হয়। পণ্ডিতদের অনুমান প্রাচীনকালে ভারতে ব্রাহ্মী লিপির ব্যাপক প্রচলন ছিল। ক্রমপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে প্রাচীন ব্রাহ্মী লিপিই বর্তমান দেবনাগরী অক্ষরে পরিণত হয়েছে। ডি. ডি. ভান্ডারকরের মতে, ব্রাহ্মী লিপি ভারতবর্ষেই উদ্ভূত হয়েছে। ড. রমেশচন্দ্র মজুমদারও এই মত সমর্থন করেন।
মৌর্য ও শুঙ্গদের শাসনকালে সংস্কৃত ভাষার পরিশুদ্ধিকরণ ঘটে। এই কাজে পাণিনির গ্রন্থের দুই ভাষ্যকার ব্যাদি ও পতঞ্জলি বিশেষ কৃতিত্ব দেখান।
ব্যাদি পাণিনির সূত্র ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে লক্ষাধিক শ্লোক রচনা করেছিলেন এবং প্রায় চৌদ্দ হাজার বিষয় সেখানে আলোচিত হয়েছে। পাণিনির সংস্কৃতের পরিভাষাগুলি ব্যাদির সৃষ্টি বলেই মনে করা হয়। এমনকি, পতঞ্জলির ‘মহাভাষ্য'-র ভিত্তিও ছিলেন ব্যাদি। পাণিনির রচনার উপর অন্য দুজন ব্যাখ্যাকার ছিলেন কাত্য এবং কাত্যায়ন। পতঞ্জলি কাত্যকে ‘ভগবান কাত্য’ নামে উল্লেখ করে সংস্কৃত সাহিত্যের আধুনিকীকরণে তাঁর গুরুত্ব বুঝিয়েছেন।
কাত্যর টিকাভাষ্য ‘মহাবর্তিকা' নামে পরিচিত। মৌর্যযুগের বিশিষ্ট রচনাকার ছিলেন কাত্যায়ন। তিনি সরাসরি পাণিনির সূত্রের সমালোচনা ও সংশোধন করেছিলেন। এজন্য কাত্যায়নকে পাণিনির ব্যাকরণের শ্রেষ্ঠ ভাষ্যকার বলা হয়। তবে পাণিনির সূত্রের সমালোচনা, সংশোধন বা পরিমার্জনার কাজে সর্বোচ্চ কৃতিত্বের দাবিদার পতঞ্জলি। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকের প্রথম দিকে তাঁর আবির্ভাব ঘটেছিল। সম্ভবত তিনি রাজা পুষ্যমিত্র শুঙ্গের রাজসভা অলংকৃত করেছিলেন।
পতঞ্জলি মনে করতেন যে, শব্দ চিরন্তন। তাকে খেয়াল খুশিমত পাল্টে ফেলা যায় না, তবে শোধণ করা যায়। তিনি পাণিনির অবদানকে স্থায়ী ভিত্তি দিতে আন্তরিক চেষ্টা করেন। কোন কোন ক্ষেত্রে পাণিনির সূত্রকে তিনি সমালোচনা করেছেন। তবে সম্পূর্ণরূপে বর্জনীয় বলেন নি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংস্কৃত ভাষার যে সব পরিবর্তন জরুরী হয়েছিল, সেগুলির দিকে তাকিয়ে তিনি ‘মহাভাষ্য' গ্রন্থে পাণিনির রচনার সাথে সামঞ্জস্য রেখে কিছু পরিপূরক শব্দগুচ্ছ (বিধি) যুক্ত করেছিলেন। পতঞ্জলির মহাভাষ্যে সংস্কৃত গদ্যের যে গঠন রীতি প্রয়োগ করা হয়েছিল, তা পরবর্তী বহুকাল অপরিবর্তিত ছিল। এই গ্রন্থকে কেবল ব্যাকরণের টিকা ভাষ্য না বলে সমাজ, সাহিত্য ও দর্শনের প্রতীক বলা যায়।
পতঞ্জলির আন্তরিক প্রয়াস সত্ত্বেও পাণিনির সংস্কৃত-সূত্র ক্রমশ গুরুত্বহীন প্রতিপন্ন হয়েছিল। খ্রিষ্টীয় তৃতীয়-চতুর্থ শতকে বৈজ, সৌভব প্রমুখ নতুন ধারায় সংস্কৃত ভাষাচর্চা শুরু করেছিলেন। পাণিনির সূত্র ও পতঞ্জলির ভাষ্য দক্ষিণ ভারতে কোনক্রমে টিকেছিল। এই কাজে কৃতিত্ব দেখান চন্দ্রাচার্য।
সাতবাহন বংশীয় রাজা হালের উদ্যোগে সংস্কৃত ভাষা চর্চায় এক নতুন ধারার সংযোজন ঘটে। রাজা হালের নির্দেশে তাঁর জনৈক ব্রাহ্মণ অনুচর সর্ববর্মন সংস্কৃতের একটি সংক্ষিপ্ত (কাতন্ত্র) ব্যাকরণ রচনা করেন।
এই ‘কাতন্ত্র’ ব্যাকরণে পাণিনির সূত্রাবলীর সামান্য অংশ গৃহীত হয়েছিল। সংস্কৃত ভাষাকে জনপ্রিয় করার জন্য এই ব্যাকরণের সৃষ্টি বলে মনে করা হয়। এক্ষেত্রে সংস্কৃত ব্যাকরণ কার্যত পাণিনির আগের রূপে ফিরে গিয়েছিল। তবে কাতন্ত্র ব্যাকরণ তিব্বত সহ দেশের বিভিন্ন অংশে জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। কাচ্ছায়নের পালি ব্যাকরণ বা প্রাচীন তামিল ব্যাকরণের উপর ‘কাতন্ত্র’ ব্যাকরণের বিশেষ প্রভাব ছিল।
কাব্য সাহিত্যের মৃদু আভাস পতঞ্জলির মহাভাষ্যে খুঁজে পাওয়া যায়। তবে ভারতবর্ষের প্রাচীনতম কাব্য হিসেবে মহাকাব্যদ্বয় রামায়ণ ও মহাভারতের নাম উচ্চারিত হয়। এই দুটি মহাকাব্যকে বিশুদ্ধ ধর্মগ্রন্থ বলা সঙ্গত নয়। তবে ধর্মকে আশ্রয় করে এই দুটি গ্রন্থে ভারতবর্ষের প্রাণের নির্যাস তুলে ধরার প্রয়াস আছে। এখানে ধর্ম মানে সদাচার, সৎ বিশ্বাস ও সৎ কর্ম। তাই মহাকাব্য দুটিকে ‘ভারতবর্ষের প্রাণের মূর্তিবিগ্রহ' বলে ড. প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ উল্লেখ করেছেন।
আশা করি আমার ভাই বোনের এই পোস্টটি অনেক ভালো লেগেছে। এর সাথে প্রাচীন ভারতে সাহিত্য বিষয়টিও তোমরা বুঝতে পেরেছ। যদি এই পোস্টটি থেকে কিছু উপকার পাও, তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে কখনো ভুলবেন না।