জাল দলিল কিভাবে সনাক্ত করব? জেনে নিন আজকেই

আজকে আমরা সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ভাইদের জন্য নিয়ে এসেছি “জাল দলিল কিভাবে সনাক্ত করবেন”। আসা করি আপনাদের এই টপিক পছন্দ হবে। তো চলুন পড়া যাক:

জাল দলিল কিভাবে সনাক্ত করবেন

আমাদের দেশে জমি-জমা ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেএে জাল দলিলের ব্যবহার কোন নতুন বিষয় নয় । বহুআগ থেকে শুরু করে আজও যএতএ জাল দলিলের ব্যবহার হচ্ছে ।

 বেশিরভাগ ক্ষেএে দেখা যায় সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অসৎ কর্মচারীর যোগসাযোসে মালিকের ছদ্মবেশে ভূয়া মালিক সাজিয়ে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে জমি রেজিস্ট্রি করে নেয় মালিকানা ছাড়াই ভূয়া মালিক ।

আবার অনেক ক্ষেএে দেখা যায়, সহ-শরিকদের অজান্তে বণ্টননামার ক্ষেত্রে ভুয়া বণ্টননামা করে দলিল জাল করা হয় এবং আদালত থেকে বণ্টননামা সম্পন্ন করতে হয় না যেসব ক্ষেএে সে সব ক্ষেএে জাল দলিল তৈরি হয়ে থাকে। 

বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের অশিক্ষিত লোকের ক্ষেএে নকল স্বাক্ষর প্রদান করে জাল দলিল তৈরির প্রবণতা বেশি দেখা যায় ।

আবার অনেক সময় ওভাররাইটিং ও কাটাছেঁড়া কিংবা ঘষামাজা করে অথবা মূল তারিখ ঠিক রেখে দলিল অথবা এর বিষয় বস্তু জাল করা হয় ।

কিংবা জমির মূল মালিক দেশের বাহিরে অবস্থান করলে দেখা যায় তার নিকটাত্মীয়/অন্যরা জাল দলিল তৈরি করে নেয় এবং তা ব্যবহার করে জমি-জমা বিক্রির পাশাপাশি ব্যাংক থেকে ঋণও গ্রহণ করে। 

পরবর্তীতে এ ঋণের টাকা পরিশোধ না করে মূল মালিকের নিকটাত্মীয়/অন্যরা আত্মগোপন করেন এবং তার বরাবর নোটিশের মাধ্যমে সার্টিফিকেট মামলার তাগিদ পএ পাঠানো হয়, ফলে জমির মূল মালিক বিপাকে পড়েন ।

বিশেষ করে এজমালি সম্পত্তির (ভাইবোন মিলে যে সম্পত্তি ভোগ করে থাকে) ক্ষেএে দেখা যায় বোনদের না জানিয়ে ভাইয়েরা তাদের নামে সম্পত্তির দলিল করিয়ে নেয় এবংকি জমি বিক্রিও করে ফেলে । পরবর্তীতে বোনেরা সম্পত্তির দাবি করলে ক্রেতাকে বিপদে পড়তে হয়।

নিন্মে জাল দলিল চেনার কিছু টিপস দেওয়া হল :

ক) দলিলের প্রকৃতি অনুযায়ী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে চারটি রেজিস্ট্রার বা ভলিউমে লেখা হয়ে থাকে। যদি কোন দলিল নিয়ে সন্দেহ দেখা দিলে দলিলটির যাবতীয় তথ্য দিয়ে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নির্দিষ্টভাবে দরখাস্ত করে রেজিস্ট্রি অফিসে সংরক্ষণ করা দলিলের সাথে মিলিয়ে দেখতে হবে।

খ) একই জমি একাধিক মালিকের নামে মালিকানা করা থাকলে সরেজমিনে জমিটি যে এলাকায় সেখানে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে মূল মালিক কে, তা খুঁজে বের করতে হবে।

গ) স্বাক্ষর জালিয়াতির ক্ষেত্রে ভূমি অফিস থেকে বিভিন্ন সিল পরীক্ষা করে ও স্বাক্ষর বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে সত্যতা যাচাই করিয়ে নকল স্বাক্ষর নির্ণয় করতে হবে। তবে এ সময় কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে । যেমন :

# পুরনো দলিল কিন্তু সিল নতুন, কিংবা সরকারী বন্ধের দিনের উল্লেখিত তারিখ,

# পুরোনো চিহ্নিত সিল কিন্তু নতুন, বিশেষ করে অর্পিত বা মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি জীবিত দেখিয়ে নকল করা।

ঘ) মিউটেশন বা নামজারিতে ধারাবাহিকতা ঠিক আছে কি না সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস থেকে তা জেনে নিতে হবে। বিশেষ করে :

# বিক্রেতার খতিয়ানের সঙ্গে সিএস জরিপের মিল,

# জমিটি যতবার বিক্রি হয়েছে জরিপ খতিয়ানে জমির ঠিকানা ও দাগ নম্বরের পরিমাণ ততবার ঠিক উল্লেখিত আছে কিনা।

ঙ) বিক্রেতার কাছ থেকে জমির সঠিক মালিকানা জানতে ভায়া দলিল সহ সব দলিল চেয়ে নিয়ে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে জমির ক্রমিক ও দলিল নম্বর মেলাতে হবে ।

চ) জমিটির কোনো আমমোক্তারনামা দলিল করা হয়ে থাকলে তাতে উভয় পক্ষের ছবি ব্যবহার হয়েছে কি না তা দেখে নিতে হবে ।

ছ) দানকৃত জমির ক্ষেএে :

# দলিল সম্পাদনের ও দখলের তারিখ,

# দলিলদাতার সঙ্গে গ্রহীতার সম্পর্ক এবং দলিলটি রেজিস্ট্রি করা হয়েছে কি না তা দেখে নিতে হবে ।

জ) সর্বশেষবার জমিটি বিক্রির সময় যে দলিল লেখকের সহায়তা গ্রহন করা হয়েছে তার নাম এবং ঠিকানা সংগ্রহ করে প্রয়োজনে তার সাথে সরাসরি দেখা করে আলাপ করে নিতে হবে ।

ঝ) দলিলের উল্টো পৃষ্টায় উল্লেখিত স্ট্যাম্প ভেন্ডারের নাম, ঠিকানা ও ক্রমিক নম্বর এবং বিক্রির তারিখ দেখে এর সত্যতা জেনে নিতে 


আশা করি আপনারা জাল দলিল কিভাবে সনাক্ত করবেন, টপিকটি বুঝতে পেরেছেন। যদি এই পোস্ট টি আপনার উপকারে আসে তা হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন