প্রেষণা কি? [২০২৩] | প্রেষণা চক্র বলতে কি বুঝায়? | জীবনে সাফল্য লাভের ক্ষেত্রে প্রেষণার গুরুত্ব | প্রেষণার স্তর কয়টি ও কী কী?

প্রেষণা কি, প্রেষণা চক্র বলতে কি বুঝায়, জীবনে সাফল্য লাভের ক্ষেত্রে প্রেষণার গুরুত্ব: প্রিয় পাঠক আসসালামু আলাইকুম, স্বাগত জানাচ্ছি আজকের এই প্রেষণা কি, প্রেষণা চক্র বলতে কি বুঝায়, জীবনে সাফল্য লাভের ক্ষেত্রে প্রেষণার গুরুত্ব পোস্টে। আশা করি আপনারা এই পোস্টটি পড়ে কিছুটা হলেও লাভবান হবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। 

আপনারা যদি আমাদের প্রেষণা কি, প্রেষণা চক্র বলতে কি বুঝায়, জীবনে সাফল্য লাভের ক্ষেত্রে প্রেষণার গুরুত্ব পোস্টটি পড়ে এতটুকুও উপকৃত হন তবেই আমাদের কষ্ট সার্থক হবে। তো চলুন কথা না বাড়িয়ে আজকের বিষয়ে আলোচনা করা যাক।

প্রেষণা কি?


আগে সহজ ভাষায় বলি,প্রেষণা এমন একটি মানসিক অবস্থা যা আমাদের বিশেষ একটি ক্রিয়া সম্পাদন করতে উদ্বুদ্ধ করে এবং কাজকে নির্দিষ্ট লক্ষ্য মুখী করে ও লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সেই কাজে ব্যাপৃত রাখে।

ব্যাখা: মানুষ তথা কর্মীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয়৷ কিন্তু অনেক সময় প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী শারীরিকভাবে কাজের উপযুক্ত হলেও বিভিন্ন কারণে কাজ কারার জন্য মানসিভাবে প্রস্তুত নাও থাকতে পারে৷

একজন ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব হল প্রত্যেক কর্মচারীর বৈশিষ্ট্য,যোগ্যতা,অভাব ও প্রায়োজন চিহ্নিত করে এবং তাদেরকে কাজের প্রতি আগ্রহী ও মনোযোগী করে তোলার ব্যবস্থা গ্রহণ করা

সাধারণ অর্থে কর্মীদেরকে কার্যে অনুপ্রাণিত করার প্রক্রিয়াকে প্রেষণা বলে৷ ব্যাপক অর্থে প্রেষণা হল এমন এক মানসিক শক্তি, যা মানুষকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ও আগ্রহের সাথে নিজের সামর্থ্যকে ব্যবহার করে কার্যসম্পাদনের চেষ্টা করতে উদ্বুদ্ধ  করে৷ 

প্রেষণার গুরুত্ব?


ব্যবস্থাপনার কাজ হল অন্যের দ্বারা কাজ সম্পাদন করিয়ে নেয়া তাই আধুনিক ব্যবস্থাপনা কর্মীদের সন্তষ্টি অর্জনের বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে৷ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে প্রেষণায় গুরুত্ব আলোচনা করা হলঃ
  • কার্য সম্পাদন ও লক্ষ্য অর্জন
  • তত্ত্বাবধানের ব্যয় হ্রাস
  • আগ্রহ সৃষ্টি
  • প্রয়োজনের পরিতৃপ্তি
  • কর্মীদের মনোবল বৃদ্ধি
  • সম্পর্কোন্নয়ন
  • দক্ষতা বৃদ্ধি
  • উদ্যেগ ও উন্নয়ন
  • নমনীয়তা বৃদ্ধি

কর্মীদের মনোবল বৃদ্ধি

প্রেষনার দ্বারা  কর্মীদের বিভিন্ন প্রয়োজন মোটানো হয় বলে কর্মীগণের কাজে সন্তুষ্টি ও আগ্রহ বাড়ে যা কর্মীদের মনোবল বৃদ্ধি উন্নয়নে সহায়ক হয়৷

কার্য সম্পাদন ও লক্ষ্য অর্জন

প্রেষণার দ্বারা কর্মীদের দক্ষতা জ্ঞান অভিজ্ঞতা ইত্যাদির সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে সুচারুরূপে কার্য সম্পাদন করা যায়৷ ফলে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন সহজ হয়৷

তত্ত্বাবধানের ব্যয় হ্রাস

কর্মীদেরকে সঠিকভাবে কাজে প্রেষণা দেয়া হলে তাদের কাজের প্রতি একাগ্রতা ও মনোযোগ বৃদ্ধি পায়৷ ফলে তাদেরকে নিবিড়ভাবে তত্ত্বাবধান করার প্রয়োজন হয় না৷ এতে তত্ত্বাবধান ব্যয় হ্রাস পায়৷

অপচয় ও অপব্যয় হ্রাস

প্রেষনায় উদ্বুদ্ধ হতে কর্মীগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করে৷ ফলে শ্রম সময় ও সম্পদের অনাহুত অপচয় ও অপব্যয় হ্রাস পায়৷

সম্পর্কোন্নয়ন

প্রেষণা দ্বারা কর্মীদের চাহিদা ও প্রয়োজন মেটানো হয় বলে কর্মীগণের মধ্যে সৌহার্দ্যমূলক সম্পর্কের সৃষ্টি হয় এবং প্রতিষ্ঠানে সুশৃঙ্খল কর্মপরিবেশ বিরাজ করে৷

আগ্রহ সৃষ্টি

আর্থিক ও অনার্থিক বিভিন্ন উপায়ে কর্মীদের প্রয়োজন মেটানোর ফলে তাদের মধ্যে কাজের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতি মমত্ব বৃদ্ধি পায়৷

প্রয়োজনের পরিতৃপ্তি

প্রেষণার মাধ্যমে শ্রমিক কর্মীদের বিভিন্ন ধরনের আর্থিক মানসিক ইত্যাদি চাহিদা মেটানো হয়৷

দক্ষতা বৃদ্ধি

কাজের প্রতি আন্তরিকতা থাকলে স্বাভাবিকভাবেই কর্মীরা সেই কাজে আনন্দ পায় এবং আনন্দ সহযোগে যে কোন কর্ম প্রচেষ্টা তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে৷

নমনীয়তা বৃদ্ধি

প্রেষণা কর্মক্ষেত্রে নমনীয়তা বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে৷ প্রেষণা দানের মাধ্যমে কর্মীদের মনোবল উন্নয়ন করা সম্ভব হলে যে কোন পরিবর্তনের প্রতি তারা অনুকূল সাড়া দেয়৷

উদ্যেগ ও উন্নয়ন

প্রেষণা শুধু মানসিক সন্তুষ্টিই সৃষ্টি করে না তা কর্মীদের নব নব পন্থা উদ্ভাবনের মাধ্যমে উত্তম উপায় কাজ সম্পাদনে উদ্যোগী করে তোলে৷

প্রেষণার বৈশিষ্ট্য কি?


প্রেষণার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। যেমন -

  1. প্রেষণা চিরস্থায়ী নয়। মাঝপথে কমে যেতে পারে। এমনকি কোনো লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয় বলে মনে হলে প্রেষণা মাঝপথে শেষ হয়ে যেতে পারে।
  2. প্রেষণা বাধাপ্রাপ্ত হলে মানুষের প্রক্ষোভ সৃষ্টি হয়।
  3. প্রেষণার তীব্রতা অনুযায়ী কাজের গতি ও উদ্দেশ্য বাছাই করা প্রয়োজন হয়।
  4. প্রেষণা আচরণ সম্পন্ন করে না আচরণ করতে উদ্বুদ্ধ করে।
  5. প্রেষণা আচরণের অভিমুখ নির্দেশ করে মাত্র।
  6. একটি উদ্দেশ্য পূরণের প্রেষণা অন্য উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কার্যকর হতে পারে না।
  7. প্রেষণা কার্যপদ্ধতি স্থির করে না, কার্যপদ্ধতি বক্তি নিজেই স্থির করে নেয় ধনী হওয়ার জন্য বাসনায় ব্যক্তি কোন পথ বেছে নেবে তা ব্যক্তির নিজস্ব।

প্রেষণা চক্র কি?

প্রেষণা একটি বিরামহীন প্রক্রিয়া। ইহা তিনটি অবস্থায় পর্যায়ক্রমিকভাবে আবর্তিত হতে থাকেঃ

  1. উদ্দেশ্য অর্জন
  2. উদ্দেশ্যমূলক আচরণ 
  3. অভাববোধ 

প্রেষণা হলো এমন একটি মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা যা কোন নির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনে সহায়ক হয়৷ প্রেষণার সাথে অভিপ্রায় আচরণা ও লক্ষ্য এর একটি প্রক্রিয়াগত সম্পর্ক রয়েছে৷ বস্তুত কোন ব্যক্তির আচরণ তার অভিপ্রায় দ্বারাই প্রভাবান্বিত কিন্তু বাহ্যিক চালিকাশক্তি হিসেবে তার লক্ষ্যসমূহ এ অভিপ্রায় হাসিলেও সহায়ক হয়৷

প্রেষণা ক্ষেত্রে লক্ষ্য বা প্রণোদনাসমূহ ব্যক্তিবিশেষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ কেননা এটি অভিপ্রায় সিদ্ধান্ত জন্য সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে৷ নিম্নোক্ত চিত্রে প্রেষণা প্রক্রিয়ার উপাদানগুলো দেখানো হলঃ 
প্রেষণা কি? [২০২৩] |  প্রেষণা চক্র বলতে কি বুঝায়? |  জীবনে সাফল্য লাভের ক্ষেত্রে প্রেষণার গুরুত্ব | প্রেষণার স্তর কয়টি ও কী কী?
প্রেষণা কি?

এভাবে প্রেষণা প্রক্রিয়া মানুষের জীবনব্যাপী চক্রাকারে আবর্তিত হতে  থাকে৷ আর প্রেষণা আছে বলেই মানিষের মধ্যে নতুন নতুন কর্মের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি হয় এবং কর্ম প্রেষণায় উদ্বুদ্ধ হয়৷ 

মানুষের অভাববোধ আছে বলেই অভাব পূরণের জন্য উদ্দেশ্যমূলক আচরণ করে এবং উদ্দেশ্যমূলক আচরণের মাধ্যমে অভাব পূরণজনিত লক্ষ্য অর্জন করে। যার ফলে প্রেষণার পরিসমাপ্তি ঘটে। আর এটাই প্রেষণার প্রক্রিয়া।

উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে কোন প্রতিষ্টানে সকল পর্যায়ের কর্মীদের কাজের প্রতি উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করা না গেলে কখনই লক্ষ্যার্জন সম্ভব নয়৷ আর এ কারণেই ব্যবস্থাপককে সবসময়ই এ বিষয়ে যত্নবান হওয়া আবশ্যক৷

Simple Question:

1.প্রেষণার স্তর কয়টি ও কী কী?

প্রেষণার স্তর প্রধানত ৩টি। যথা

১. অভাব বোধ (Need)
২. উদ্দেশ্যমূলক আচরণ এবং
৩. উদ্দেশ্য সাধন।

তো বন্ধুরা আশা করি আমাদের এই পোস্টটি আপনাদের মনোপুত হয়েছে। ‘প্রেষণা কি, প্রেষণা চক্র বলতে কি বুঝায়, জীবনে সাফল্য লাভের ক্ষেত্রে প্রেষণার গুরুত্ব’ এরকম আরো বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে আমাদের  সাথেই থাকবেন বলে আশা করি। আপনাদের সবার সুস্বাস্থ্য এবং সুন্দর ভবিষ্যৎ কামনা করে শুভ বিদায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন