কুলি মজুর কবিতা – কাজী নজরুল ইসলাম | ভালো কবিতা

কুলি মজুর কবিতা: আমরা, অনেকে আমাদের প্রিয় লেখক কাজী নজরুল ইসলাম এর কুলি মজুর কবিতাটি পড়তে পছন্দ করি। তাই তাদের কথা ভেবে আজকে আমরা এই বিখ্যাত কবির কবিতাটি উপস্থাপন করলাম। 

মানব মনের ভাবনা-কল্পনা যখন অনুভূতি রঞ্জিত যথাবিহীত শব্দসম্ভারে বাস্তব সুষমামন্ডিত চিত্রাত্মক ও ছন্দোময় রূপ লাভ করাকেই কবিতা বলে। যদি আপনাদের ভালো লাগে তাহলে আমাদের এই Valo-kobita.com সাইটের সাথে থাকবেন।

কুলি মজুর কবিতা – কাজী নজরুল ইসলাম



কুলি মজুর কবিতা

কাজী নজরুল ইসলাম

দেখিনু সেদিন রেলে,
কুলি বলে এক বাবু সা’ব তারে ঠেলে দিলে নীচে ফেলে!
                         চোখ ফেটে এল জল,
এমনি করে কি জগৎ জুড়িয়া মার খাবে দুর্বল?
যে দধীচিদের হাড় দিয়ে ঐ বাষ্প-শকট চলে,
বাবু সা’ব এসে চড়িল তাহাতে, কুলিরা পড়িল তলে।
বেতন দিয়াছ?-চুপ রও যত মিথ্যাবাদীর দল!
কত পাই দিয়ে কুলিদের তুই কত ক্রোর পেলি বল্‌?
রাজপথে তব চলিছে মোটর, সাগরে জাহাজ চলে,
রেলপথে চলে বাষ্প-শকট, দেশ ছেয়ে গেল কলে,
বল ত এ-সব কাহাদের দান! তোমার অট্টালিকা
কার খুনে রাঙা? -ঠুলি খুলে দেখ, প্রতি ইটে আছে লিখা।
তুমি জান নাকো, কিন্তু পথের প্রতি ধূলিকণা জানে,
ঐ পথ, ঐ জাহাজ, শকট, অট্টালিকার মানে!
                         আসিতেছে শুভদিন,
দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ!
হাতুড়ি শাবল গাঁইতি চালায়ে ভাঙিল যারা পাহাড়,
পাহাড়-কাটা সে পথের দু’পাশে পড়িয়া যাদের হাড়,
তোমারে সেবিতে হইল যাহারা মজুর, মুটে ও কুলি,
তোমারে বহিতে যারা পবিত্র অঙ্গে লাগাল ধূলি;
তারাই মানুষ, তারাই দেবতা, গাহি তাহাদেরি গান,
তাদেরি ব্যথিত বক্ষে পা ফেলে আসে নব উত্থান!
তুমি শুয়ে রবে তেতালার পরে, আমরা রহিব নিচে,
অথচ তোমারে দেবতা বলিব, সে-ভরসা আজ মিছে!
সিক্ত যাদের সারা দেহ-মন মাটির মমতা-রসে
এই ধরণীর তরণীর হাল রবে তাহাদেরি বশে!
তারি পদরজ অঞ্জলি করি মাথায় লইব তুলি,
সকলের সাথে পথে চলি যার পায়ে লাগিয়াছে ধূলি!
আজ নিখিলের বেদনা -আর্ত পীড়িতের মাখি খুন,
লালে লাল হয়ে উদিছে নবীন প্রভাতের নবারুণ!
আজ হৃদয়ের জমা-ধরা যত কবাট ভাঙিয়া দাও,
রং-করা ঐ চামড়ার যত আবরণ খুলে নাও!
আকাশের আজ যত বায়ু আছে হইয়া জমাট নীল,
মাতামাতি ক’রে ঢুকুক এ বুকে, খুলে দাও যত খিল!
সকল আকাশ ভাঙিয়া পড়ুক আমাদের এই ঘরে,
মোদের মাথায় চন্দ্র-সূর্য তারারা পড়ুক ঝরে।
সকল কালের সকল দেশের সকল মানুষ আসি
এক মোহনায় দাঁড়াইয়া শোনো এক মিলনের বাঁশী।
                         একজনে দিলে ব্যথা-
সমান হইয়া বাজে সে বেদনা সকলের বুকে হেথা।
                         একের অসম্মান
নিখিল মানব-জাতির লজ্জা-সকলের অপমান!

মহা-মানবের মহা-বেদনার আজি মহা-উত্থান,
উর্ধ্বে হাসিছে ভগবান, নীচে কাঁপিতেছে শয়তান!


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন